চিলতে রোদে পাখনা ডোবায়
মুচকী হাসে শহরতলী
রোজ সকালে পড়ছে মনে
এই কথাটা কেমনে বলি?
বালিশ চাদর এপাশ ওপাশ
একটুখানি গড়িয়ে নেওয়া,
আলতো ঘুমেই দুঃখটাকে খানিক সুখের প্রলেপ দেওয়া।।
মাঝদুপুরে হঠাত সেদিন আচমকা সব পড়লো মনে
ব্যস্ত শহর ভিড় জমালো
তাক বুঝে ঠিক ফেললো কোনে।
রেতের বেলা একলা এখন জিড়োচ্ছে সব শহরতলী
চোখ দু'টো খুব পড়ছে মনে
এই কথাটা ক্যামনে বলি...।।
------------------------------------------------------------
গানের একটা ব্যপার হচ্ছে যত সুন্দর লিরিকই হোক না কেন সুর ছাড়া ঠিক স্বাদটা পাওয়া যায় না। তাই অর্ণবের এই ভীষণ চমতকার কথাগুলোর সাথে যদি সুরটুকুও কোনভাবে তুলে দিতে পারতাম...এই ভেবে আফসোস হচ্ছে।
Wednesday, October 18, 2006
Sunday, September 10, 2006
কবিতা-বোধ
আলো-অন্ধকারে যাই--মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে;
স্বপ্ন নয়--শান্তি নয়--ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম ময়;
আমি তারে পারি না এড়াতে,
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাজ তুচ্ছ হয়--পন্ড মনে হয়;
সব চিন্তা--প্রার্থনার সকল সময়
শূণ্য মনে হয়,
শূণ্য মনে হয়।
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
আমারে সে ভালোবাসিয়াছে;
আসিয়াছে কাছে,
উপেক্ষা সে করেছে আমারে,
ঘৃণা ক'রে চ'লে গেছে--যখন ডেকেছি বারে-বারে
ভালোবেসে তারে;
তবুও সাধনা ছিলো একদিন--এই ভালোবাসা
আমি তার উপেক্ষার ভাষা
আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
অবহেলা ক'রে গেছি; যে নক্ষত্র--নক্ষত্রের দোষ
আমার প্রেমের পথে বার-বার দিয়ে গেছে বাধা
আমি তা ভুলিয়া গেছি;
তবু এই ভালোবাসা--ধুলো আর কাদা--।
মাথার ভেতরে
স্বপ্ন নয়--প্রেম নয়--কোনো এক বোধ কাজ করে।
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মত ঘুরে-ঘুরে একা কথা কয়।
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
-------------------------------------------------------
জীবনানন্দ দাশের "বোধ" কবিতার কিছু অংশ।
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে;
স্বপ্ন নয়--শান্তি নয়--ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম ময়;
আমি তারে পারি না এড়াতে,
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাজ তুচ্ছ হয়--পন্ড মনে হয়;
সব চিন্তা--প্রার্থনার সকল সময়
শূণ্য মনে হয়,
শূণ্য মনে হয়।
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
আমারে সে ভালোবাসিয়াছে;
আসিয়াছে কাছে,
উপেক্ষা সে করেছে আমারে,
ঘৃণা ক'রে চ'লে গেছে--যখন ডেকেছি বারে-বারে
ভালোবেসে তারে;
তবুও সাধনা ছিলো একদিন--এই ভালোবাসা
আমি তার উপেক্ষার ভাষা
আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
অবহেলা ক'রে গেছি; যে নক্ষত্র--নক্ষত্রের দোষ
আমার প্রেমের পথে বার-বার দিয়ে গেছে বাধা
আমি তা ভুলিয়া গেছি;
তবু এই ভালোবাসা--ধুলো আর কাদা--।
মাথার ভেতরে
স্বপ্ন নয়--প্রেম নয়--কোনো এক বোধ কাজ করে।
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মত ঘুরে-ঘুরে একা কথা কয়।
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
-------------------------------------------------------
জীবনানন্দ দাশের "বোধ" কবিতার কিছু অংশ।
Wednesday, September 06, 2006
কবিতা ও অনুবাদ
The Ecstasy
Arthur Symons
---------------------
O what is this?
Mysterious and uncapturable bliss
That I have known, yet seems to be
Simple as breathe and easy as a smile,
And older than the earth.
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুবাদ
------------------------
একি রহস্য, একি আনন্দরাশি !
জেনেছি তাহারে, পাইনি তবুও পেয়ে ।
তবু সে সহজে প্রাণে উঠে নিশ্বাসি,
তবু সে সরল যেন রে সরল হাসি--
পুরনো সে যেন এই ধরনীর চেয়ে ।
----------------------------------------------------
আমার কাছে মূলের চাইতেও অনুবাদটা অসাধারণ লেগেছিলো যখন প্রথম 'শেষের কবিতা'য় পড়েছিলাম।এখনও সেই মুদ্ধতা কাটে নি।
Arthur Symons
---------------------
O what is this?
Mysterious and uncapturable bliss
That I have known, yet seems to be
Simple as breathe and easy as a smile,
And older than the earth.
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুবাদ
------------------------
একি রহস্য, একি আনন্দরাশি !
জেনেছি তাহারে, পাইনি তবুও পেয়ে ।
তবু সে সহজে প্রাণে উঠে নিশ্বাসি,
তবু সে সরল যেন রে সরল হাসি--
পুরনো সে যেন এই ধরনীর চেয়ে ।
----------------------------------------------------
আমার কাছে মূলের চাইতেও অনুবাদটা অসাধারণ লেগেছিলো যখন প্রথম 'শেষের কবিতা'য় পড়েছিলাম।এখনও সেই মুদ্ধতা কাটে নি।
Tuesday, September 05, 2006
কবিতা "পরস্পর"
পরস্পর
জীবনানন্দ দাশ
---------------
পরী নয়, মানুষও সে হয়নি এখনও;
বলেছে সে, কাল সাঝরাতে
আবার তোমার সাথে
দেখা হবে?--আসিবে তো?--তুমি আসিবে তো?
দেখা যদি পেত !
নিকটে বসায়ে
কালো খোঁপা ফেলিত খসায়ে--
কী কথা বলিতে গিয়ে থেমে যেত শেষে
ফিক করে হেসে!
তবু, আরো কথা
বলিতে আসিত--তবু, সব প্রগলভতা
থেমে যেত!
খোঁপা বেঁধে, ফের খোঁপা ফেলিত খসায়ে--
সরে যেত, দেয়ালের গায়ে
রহিত দাঁড়ায়ে!
রাত ঢের--বাড়িবে আরো কি
এই রাত!--বেড়ে যায়, তবু চোখাচোখি
হয় নাই দেখা
আমাদের দুজনার!--দুইজন, একা!--
জীবনানন্দ দাশ
---------------
পরী নয়, মানুষও সে হয়নি এখনও;
বলেছে সে, কাল সাঝরাতে
আবার তোমার সাথে
দেখা হবে?--আসিবে তো?--তুমি আসিবে তো?
দেখা যদি পেত !
নিকটে বসায়ে
কালো খোঁপা ফেলিত খসায়ে--
কী কথা বলিতে গিয়ে থেমে যেত শেষে
ফিক করে হেসে!
তবু, আরো কথা
বলিতে আসিত--তবু, সব প্রগলভতা
থেমে যেত!
খোঁপা বেঁধে, ফের খোঁপা ফেলিত খসায়ে--
সরে যেত, দেয়ালের গায়ে
রহিত দাঁড়ায়ে!
রাত ঢের--বাড়িবে আরো কি
এই রাত!--বেড়ে যায়, তবু চোখাচোখি
হয় নাই দেখা
আমাদের দুজনার!--দুইজন, একা!--
Monday, September 04, 2006
কবিতা
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্নে দেখেছি যে তুমি
তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছো
এখনো কি সময় আছে তোমার জীবন্ত শরীর স্পর্শ করার
এবং যে ওষ্ঠ থেকে আমার অতি প্রিয় স্বর জন্ম নেয়
সেখানে চুম্বন দেবার?...
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি যে হয়তো
আমার পক্ষে আর জাগাই সম্ভব হবে না
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোই, আমার শরীর সব
রকম জীবন ও ভালোবাসার জন্য উন্মুক্ত......
আমি তোমার ভুরু ছুঁতে পারি, ওষ্ঠ ছুঁতে পারি এত কম......
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি, হেঁটেছি,
কথা বলেছি।
শুয়েছি তোমার ছায়ার সঙ্গে......
-------------------------------------------------------
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "ছবির দেশে, কবিতার দেশে" বইতে পড়েছিলাম, সেই থেকে সবচেয়ে প্রিয় কবিতাগুলোর একটা হয়ে আছে। মূল কবিতা রোবেয়ার দেনো'র, এখানে সুনীলের অনুবাদ তুলে দিলাম। শিরোনাম জানা নেই।
তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছো
এখনো কি সময় আছে তোমার জীবন্ত শরীর স্পর্শ করার
এবং যে ওষ্ঠ থেকে আমার অতি প্রিয় স্বর জন্ম নেয়
সেখানে চুম্বন দেবার?...
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি যে হয়তো
আমার পক্ষে আর জাগাই সম্ভব হবে না
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোই, আমার শরীর সব
রকম জীবন ও ভালোবাসার জন্য উন্মুক্ত......
আমি তোমার ভুরু ছুঁতে পারি, ওষ্ঠ ছুঁতে পারি এত কম......
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি, হেঁটেছি,
কথা বলেছি।
শুয়েছি তোমার ছায়ার সঙ্গে......
-------------------------------------------------------
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "ছবির দেশে, কবিতার দেশে" বইতে পড়েছিলাম, সেই থেকে সবচেয়ে প্রিয় কবিতাগুলোর একটা হয়ে আছে। মূল কবিতা রোবেয়ার দেনো'র, এখানে সুনীলের অনুবাদ তুলে দিলাম। শিরোনাম জানা নেই।
Tuesday, May 23, 2006
আমার এ ঘর
আমার এ ঘর ভাঙ্গিলো যে বা,
আমি বাঁধি তাঁর ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই -
যে মোরে করেছে পর।
----------------------
জসীম উদ্দীন এর কবিতা। পুরোটা মনে নেই।
আমি বাঁধি তাঁর ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই -
যে মোরে করেছে পর।
----------------------
জসীম উদ্দীন এর কবিতা। পুরোটা মনে নেই।
Monday, May 08, 2006
উপেক্ষা
উপেক্ষা
নির্মলেন্দু গুণ
-------
অনন্ত বিরহ চাই, ভালোবেসে কার্পণ্য শিখিনি৷
তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে ভুলে যেতে পারি
সমস্ত বোধের উত্স গ্রাস করা প্রেম; যদি চাও
ভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও৷
আমি কি ডরাই সখি, ভালোবাসা ভিখারি বিরহে?
( দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী; ১৯৭৪)
নির্মলেন্দু গুণ
-------
অনন্ত বিরহ চাই, ভালোবেসে কার্পণ্য শিখিনি৷
তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে ভুলে যেতে পারি
সমস্ত বোধের উত্স গ্রাস করা প্রেম; যদি চাও
ভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও৷
আমি কি ডরাই সখি, ভালোবাসা ভিখারি বিরহে?
( দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী; ১৯৭৪)
নাস্তিক
নাস্তিক
নির্মলেন্দু গুণ
-------
নেই স্বর্গলোভ কিংবা কল্প-নরকের ভয়,
অলীক সাফল্যমুক্ত কর্মময় পৃথিবী আমার৷
চর্মচোখে যা যা দেখি, শারীরিক ইন্দ্রিয় যা ধরে,
তাকেই গ্রহন করি৷ জানি, নিরাকার অপ্রত্যক্ষ
শুধুই ছলনা, বিশ্বাস করি না ভাগ্যে, দেবতার বরে৷
আমার জগত্ মুগ্ধ বাস্তবের বস্তুপুঞ্জে ঠাসা,
তাই সে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, অতীন্দ্রিয় নয়৷
অন্ধতার বধ্যভূমি আমার হদৃয়৷
সেই শ্রেষ্ঠ মানব-সন্তান, যার মন মুক্ত ভগবান৷
আমার মস্তক নিত্য নত সেই নাস্তিকের তরে৷
(দূর হ দু:শাসন ; ১৯৮৩ )
নির্মলেন্দু গুণ
-------
নেই স্বর্গলোভ কিংবা কল্প-নরকের ভয়,
অলীক সাফল্যমুক্ত কর্মময় পৃথিবী আমার৷
চর্মচোখে যা যা দেখি, শারীরিক ইন্দ্রিয় যা ধরে,
তাকেই গ্রহন করি৷ জানি, নিরাকার অপ্রত্যক্ষ
শুধুই ছলনা, বিশ্বাস করি না ভাগ্যে, দেবতার বরে৷
আমার জগত্ মুগ্ধ বাস্তবের বস্তুপুঞ্জে ঠাসা,
তাই সে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, অতীন্দ্রিয় নয়৷
অন্ধতার বধ্যভূমি আমার হদৃয়৷
সেই শ্রেষ্ঠ মানব-সন্তান, যার মন মুক্ত ভগবান৷
আমার মস্তক নিত্য নত সেই নাস্তিকের তরে৷
(দূর হ দু:শাসন ; ১৯৮৩ )
এবারই প্রথম তুমি
এবারই প্রথম তুমি
নির্মলেন্দু গুণ
-----------------
ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে
মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না
ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে
ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না৷
ফুলেও ছিলে না, ফলেও ছিলে না
নাকে মুখে চোখে চুলেও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি এখানে ছিলে না
এর আগে তুমি সেখানে ছিলে না
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
রাতের পুণ্য লগনে ছিলে না
নীল নবঘন গগনে ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি তুমিও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
(অচল পদাবলী, ১৯৮২ )
নির্মলেন্দু গুণ
-----------------
ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে
মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না
ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে
ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না৷
ফুলেও ছিলে না, ফলেও ছিলে না
নাকে মুখে চোখে চুলেও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি এখানে ছিলে না
এর আগে তুমি সেখানে ছিলে না
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
রাতের পুণ্য লগনে ছিলে না
নীল নবঘন গগনে ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি তুমিও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
(অচল পদাবলী, ১৯৮২ )
তুলনামূলক হাত
তুলনামূলক হাত
নির্মলেন্দু গুণ
------------------
তুমি যেখানেই স্পর্শ রাখো সেখানেই আমার শরীর৷
তোমার চুলের ধোয়া জল তুমি যেখানেই
খোঁপা ভেঙ্গে বিলাও মাটিকে;
আমি এসে পাতি হাত, জলভারে নতদেহ আর
চোখের সামগ্রী নিয়ে ফিরি ঘরে, অথবা ফিরি না ঘরে,
তোমার চতুর্দিকে শূন্যতাকে ভরে থেকে যাই৷
তুমি যেখানেই হাত রাখো, যেখানেই কান থেকে
খুলে রাখো দুল, কন্ঠ থেকে খুলে রাখো হার,
সেখানেই শরীর আমার হয়ে ওঠে রক্তজবা ফুল৷
তুমি যেখানেই ঠোঁট রাখো সেখানেই আমার চুম্বন
তোমার শরীর থেকে প্রবল অযত্নে ঝরে যায়৷
আমি পোকা হয়ে পিচুটির মতো
তোমার ঐ চোখের ছায়ায় প্রতিদিন খেলা করে যাই,
ভালোবেসে নিজেকে কাঁদাই৷
তুমি শাড়ির আঁচল দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিলে
আমি রথ রেখে পথে এসে তোমারই দ্বৈরথে বসে থাকি
তোমার আশায়৷ তুমি যেখানেই হাত রাখো
আমার উদগ্রীব চিত্র থাকে সেখানেই৷ আমি যেখানেই
হাত পাতি সেখানেই অসীম শূন্যতা, তুমি নেই৷
( না প্রেমিক না বিপ্লবী; ১৯৭২ )
নির্মলেন্দু গুণ
------------------
তুমি যেখানেই স্পর্শ রাখো সেখানেই আমার শরীর৷
তোমার চুলের ধোয়া জল তুমি যেখানেই
খোঁপা ভেঙ্গে বিলাও মাটিকে;
আমি এসে পাতি হাত, জলভারে নতদেহ আর
চোখের সামগ্রী নিয়ে ফিরি ঘরে, অথবা ফিরি না ঘরে,
তোমার চতুর্দিকে শূন্যতাকে ভরে থেকে যাই৷
তুমি যেখানেই হাত রাখো, যেখানেই কান থেকে
খুলে রাখো দুল, কন্ঠ থেকে খুলে রাখো হার,
সেখানেই শরীর আমার হয়ে ওঠে রক্তজবা ফুল৷
তুমি যেখানেই ঠোঁট রাখো সেখানেই আমার চুম্বন
তোমার শরীর থেকে প্রবল অযত্নে ঝরে যায়৷
আমি পোকা হয়ে পিচুটির মতো
তোমার ঐ চোখের ছায়ায় প্রতিদিন খেলা করে যাই,
ভালোবেসে নিজেকে কাঁদাই৷
তুমি শাড়ির আঁচল দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিলে
আমি রথ রেখে পথে এসে তোমারই দ্বৈরথে বসে থাকি
তোমার আশায়৷ তুমি যেখানেই হাত রাখো
আমার উদগ্রীব চিত্র থাকে সেখানেই৷ আমি যেখানেই
হাত পাতি সেখানেই অসীম শূন্যতা, তুমি নেই৷
( না প্রেমিক না বিপ্লবী; ১৯৭২ )
ফুলদানি
ফুলদানি
নির্মলেন্দু গুণ
----------
যেকোনো বাগান থেকে যেটা ইচ্ছে সেই ফুল,
যেকোনো সময় আমি তুলে নিয়ে যদি কভু
তোমার খোঁপায়, আহা, অজগর তোমার খোঁপায়
সাজাবার সুজোগ পেতাম--; তাহলে দেখতে লীলা,
তোমার শরীর ছুঁয়ে লাবণ্যের লোভন ফুলেরা
উদ্বেল হদৃয়ে নিত্য বিপর্যস্ত হতো, মত্ত মমতায়
বলতো আশ্চর্য হয়ে, হতো বলতেই;
" খোঁপার মতন কোনো ফুলদানি নেই৷ '
( প্রেমাংশুর রক্ত চাই, ১৯৭০ )
নির্মলেন্দু গুণ
----------
যেকোনো বাগান থেকে যেটা ইচ্ছে সেই ফুল,
যেকোনো সময় আমি তুলে নিয়ে যদি কভু
তোমার খোঁপায়, আহা, অজগর তোমার খোঁপায়
সাজাবার সুজোগ পেতাম--; তাহলে দেখতে লীলা,
তোমার শরীর ছুঁয়ে লাবণ্যের লোভন ফুলেরা
উদ্বেল হদৃয়ে নিত্য বিপর্যস্ত হতো, মত্ত মমতায়
বলতো আশ্চর্য হয়ে, হতো বলতেই;
" খোঁপার মতন কোনো ফুলদানি নেই৷ '
( প্রেমাংশুর রক্ত চাই, ১৯৭০ )
যুদ্ধ
যুদ্ধ
নির্মলেন্দু গুণ
-----
যুদ্ধ মানেই শত্রু শত্রু খেলা,
যুদ্ধ মানেই
আমার প্রতি তোমার অবহেলা৷
(প্রেমাংশুর রক্ত চাই; ১৯৭০)
নির্মলেন্দু গুণ
-----
যুদ্ধ মানেই শত্রু শত্রু খেলা,
যুদ্ধ মানেই
আমার প্রতি তোমার অবহেলা৷
(প্রেমাংশুর রক্ত চাই; ১৯৭০)
হুলিয়া
হুলিয়া
নির্মলেন্দু গুণ
-------------
আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
চতুর্দিকে চিক্চিক করছে রোদ্দুর-;
আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন
একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে৷
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে,
ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে
আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই
আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল, একজন পেছন থেকে
কাঁধে হাত রেখে চিত্কার করে উঠেছিল;- আমি সবাইকে
মানুষের সমিল চেহারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি৷
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, একজন রাজনৈতিক নেতা
তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন, মুখোমুখি বসে দূর থেকে
বারবার চেয়ে দেখলেন-, কিন্তু চিনতে পারলেন না৷
বারহাট্টায় নেমেই রফিজের স্টলে চা খেয়েছি,
অথচ কী আশ্চর্য, পুনর্বার চিনি দিতে এসেও
রফিজ আমাকে চিনলো না৷
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি৷
সেই একই ভাঙাপথ, একই কালোমাটির আল ধরে
গ্রামে ফেরা, আমি কতদিন পর গ্রামে ফিরছি৷
আমি যখন গ্রামে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
আমার চতুর্দিকে চিক্চিক করছে রোদ,
শো-ঁশো ঁকরছে হাওয়া৷
অনেক বদলে গেছে বাড়িটা,
টিনের চাল থেকে শুরু করে পুকুরের জল,
ফুলের বাগান থেকে শুরু করে গরুর গোয়াল;
চিহ্নমাত্র শৈশবের স্মৃতি যেন নেই কোনখানে৷
পড়ার ঘরের বারান্দায় নুয়ে-পড়া বেলিফুলের গাছ থেকে
একটি লাউডুগী উত্তপ্ত দুপুরকে তার লক্লকে জিভ দেখালো৷
স্বত:স্ফূর্ত মুখের দাড়ির মতো বাড়িটির চতুর্দিকে ঘাস, জঙ্গল,
গর্ত, আগাছার গাঢ় বন গড়ে উঠেছে অনায়াসে; যেন সবখানেই
সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে এখানে শাসন করছে গোঁয়ার প্রকৃতি৷
একটি শেয়াল একটি কুকুরের পাশে শুয়েছিল প্রায়,
আমাকে দেখেই পালালো একজন, একজন গন্ধ শুঁকে নিয়ে
আমাকে চিনতে চেষ্টা করলো- যেন পুলিশ-সমেত চেকার
তেজগাঁয় আমাকে চিনতে চেষ্টা করেছিল৷
হাঁটতে- হাঁটতে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়ালাম,
অশোক গাছ, বাষট্টির ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া অশোক,
একসময়ে কী ভীষন ছায়া দিতো এই গাছটা;
অনায়াসে দু'জন মানুষ মিশে থাকতে পারতো এর ছায়ায়৷
আমরা ভালোবাসার নামে একদিন সারারাত
এ-গাছের ছায়ায় লুকিয়ে ছিলুম৷
সেই বাসন্তী, আহা, সেই বাসন্তী এখন বিহারে,
ডাকাত স্বামীর ঘরে চার- সন্তানের জননী হয়েছে৷
পুকুরের জলে শব্দ উঠলো মাছের, আবার জিভ দেখালো সাপ,
শান্ত-স্থির-বোকা গ্রামকে কাঁপিয়ে দিয়ে
একটি এরোপ্লেন তখন উড়ে গেলো পশ্চিমে - -৷
আমি বাড়ির পেছন থেকে দরোজায় টোকা দিয়ে
ডাকলুম,--- "মা'৷
বহুদিন যে-দরোজা খোলেনি,
বহুদিন যে দরোজায় কোন কন্ঠস্বর ছিল না,
মরচে-পরা সেই দরোজা মুহূর্তেই ক্যাচ্ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো৷
বহুদিন চেষ্টা করেও যে গোয়েন্দা-বিভাগ আমাকে ধরতে পারেনি,
চৈত্রের উত্তপ্ত দুপুরে, অফুরন্ত হাওয়ার ভিতরে সেই আমি
কত সহজেই একটি আলিঙ্গনের কাছে বন্দী হয়ে গেলুম;
সেই আমি কত সহজেই মায়ের চোখে চোখ রেখে
একটি অবুঝ সন্তান হয়ে গেলুম৷
মা আমাকে ক্রন্দনসিক্ত একটি চুম্বনের মধ্যে
লুকিয়ে রেখে অনেক জঙ্গলের পথ অতিক্রম করে
পুকুরের জলে চাল ধুতে গেলেন; আমি ঘরের ভিতরে তাকালুম,
দেখলুম দু'ঘরের মাঝামাঝি যেখানে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি ছিল,
সেখানে লেনিন, বাবার জমা- খরচের পাশে কার্ল মার্কস;
আলমিরার একটি ভাঙ্গা- কাচের অভাব পূরণ করছে
ক্রুপস্কায়ার ছেঁড়া ছবি৷
মা পুকুর থেকে ফিরছেন, সন্ধ্যায় মহকুমা শহর থেকে
ফিরবেন বাবা, তাঁর পিঠে সংসারের ব্যাগ ঝুলবে তেমনি৷
সেনবাড়ি থেকে খবর পেয়ে বৌদি আসবেন,
পুনর্বার বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন আমাকে৷
খবর পেয়ে যশমাধব থেকে আসবে ন্যাপকর্মী ইয়াসিন,
তিন মাইল বিষ্টির পথ হেঁটে রসুলপুর থেকে আসবে আদিত্য৷
রাত্রে মারাত্মক অস্ত্র হাতে নিয়ে আমতলা থেকে আসবে আব্বাস৷
ওরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করবে ঢাকার খবর:
-- আমাদের ভবিষ্য়্ত্ কী?
-- আইয়ুব খান এখন কোথায়?
-- শেখ মুজিব কি ভুল করেছেন?
-- আমার নামে কতদিন আর এরকম হুলিয়া ঝুলবে?
আমি কিছুই বলবো না৷
আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকা সারি সারি চোখের ভিতরে
বাংলার বিভিন্ন ভবিষ্য়্ত্কে চেয়ে চেয়ে দেখবো৷
উত্কন্ঠিত চোখে চোখে নামবে কালো অন্ধকার, আমি চিত্কার করে
কন্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার জ্বালা মুছে নিয়ে বলবো:
" আমি এসবের কিছুই জানি না,
আমি এসবের কিছুই বুঝি না৷'
(প্রেমাংশুর রক্ত চাই, ১৯৭০ )
নির্মলেন্দু গুণ
-------------
আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
চতুর্দিকে চিক্চিক করছে রোদ্দুর-;
আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন
একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে৷
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে,
ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে
আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই
আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল, একজন পেছন থেকে
কাঁধে হাত রেখে চিত্কার করে উঠেছিল;- আমি সবাইকে
মানুষের সমিল চেহারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি৷
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, একজন রাজনৈতিক নেতা
তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন, মুখোমুখি বসে দূর থেকে
বারবার চেয়ে দেখলেন-, কিন্তু চিনতে পারলেন না৷
বারহাট্টায় নেমেই রফিজের স্টলে চা খেয়েছি,
অথচ কী আশ্চর্য, পুনর্বার চিনি দিতে এসেও
রফিজ আমাকে চিনলো না৷
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি৷
সেই একই ভাঙাপথ, একই কালোমাটির আল ধরে
গ্রামে ফেরা, আমি কতদিন পর গ্রামে ফিরছি৷
আমি যখন গ্রামে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
আমার চতুর্দিকে চিক্চিক করছে রোদ,
শো-ঁশো ঁকরছে হাওয়া৷
অনেক বদলে গেছে বাড়িটা,
টিনের চাল থেকে শুরু করে পুকুরের জল,
ফুলের বাগান থেকে শুরু করে গরুর গোয়াল;
চিহ্নমাত্র শৈশবের স্মৃতি যেন নেই কোনখানে৷
পড়ার ঘরের বারান্দায় নুয়ে-পড়া বেলিফুলের গাছ থেকে
একটি লাউডুগী উত্তপ্ত দুপুরকে তার লক্লকে জিভ দেখালো৷
স্বত:স্ফূর্ত মুখের দাড়ির মতো বাড়িটির চতুর্দিকে ঘাস, জঙ্গল,
গর্ত, আগাছার গাঢ় বন গড়ে উঠেছে অনায়াসে; যেন সবখানেই
সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে এখানে শাসন করছে গোঁয়ার প্রকৃতি৷
একটি শেয়াল একটি কুকুরের পাশে শুয়েছিল প্রায়,
আমাকে দেখেই পালালো একজন, একজন গন্ধ শুঁকে নিয়ে
আমাকে চিনতে চেষ্টা করলো- যেন পুলিশ-সমেত চেকার
তেজগাঁয় আমাকে চিনতে চেষ্টা করেছিল৷
হাঁটতে- হাঁটতে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়ালাম,
অশোক গাছ, বাষট্টির ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া অশোক,
একসময়ে কী ভীষন ছায়া দিতো এই গাছটা;
অনায়াসে দু'জন মানুষ মিশে থাকতে পারতো এর ছায়ায়৷
আমরা ভালোবাসার নামে একদিন সারারাত
এ-গাছের ছায়ায় লুকিয়ে ছিলুম৷
সেই বাসন্তী, আহা, সেই বাসন্তী এখন বিহারে,
ডাকাত স্বামীর ঘরে চার- সন্তানের জননী হয়েছে৷
পুকুরের জলে শব্দ উঠলো মাছের, আবার জিভ দেখালো সাপ,
শান্ত-স্থির-বোকা গ্রামকে কাঁপিয়ে দিয়ে
একটি এরোপ্লেন তখন উড়ে গেলো পশ্চিমে - -৷
আমি বাড়ির পেছন থেকে দরোজায় টোকা দিয়ে
ডাকলুম,--- "মা'৷
বহুদিন যে-দরোজা খোলেনি,
বহুদিন যে দরোজায় কোন কন্ঠস্বর ছিল না,
মরচে-পরা সেই দরোজা মুহূর্তেই ক্যাচ্ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো৷
বহুদিন চেষ্টা করেও যে গোয়েন্দা-বিভাগ আমাকে ধরতে পারেনি,
চৈত্রের উত্তপ্ত দুপুরে, অফুরন্ত হাওয়ার ভিতরে সেই আমি
কত সহজেই একটি আলিঙ্গনের কাছে বন্দী হয়ে গেলুম;
সেই আমি কত সহজেই মায়ের চোখে চোখ রেখে
একটি অবুঝ সন্তান হয়ে গেলুম৷
মা আমাকে ক্রন্দনসিক্ত একটি চুম্বনের মধ্যে
লুকিয়ে রেখে অনেক জঙ্গলের পথ অতিক্রম করে
পুকুরের জলে চাল ধুতে গেলেন; আমি ঘরের ভিতরে তাকালুম,
দেখলুম দু'ঘরের মাঝামাঝি যেখানে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি ছিল,
সেখানে লেনিন, বাবার জমা- খরচের পাশে কার্ল মার্কস;
আলমিরার একটি ভাঙ্গা- কাচের অভাব পূরণ করছে
ক্রুপস্কায়ার ছেঁড়া ছবি৷
মা পুকুর থেকে ফিরছেন, সন্ধ্যায় মহকুমা শহর থেকে
ফিরবেন বাবা, তাঁর পিঠে সংসারের ব্যাগ ঝুলবে তেমনি৷
সেনবাড়ি থেকে খবর পেয়ে বৌদি আসবেন,
পুনর্বার বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন আমাকে৷
খবর পেয়ে যশমাধব থেকে আসবে ন্যাপকর্মী ইয়াসিন,
তিন মাইল বিষ্টির পথ হেঁটে রসুলপুর থেকে আসবে আদিত্য৷
রাত্রে মারাত্মক অস্ত্র হাতে নিয়ে আমতলা থেকে আসবে আব্বাস৷
ওরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করবে ঢাকার খবর:
-- আমাদের ভবিষ্য়্ত্ কী?
-- আইয়ুব খান এখন কোথায়?
-- শেখ মুজিব কি ভুল করেছেন?
-- আমার নামে কতদিন আর এরকম হুলিয়া ঝুলবে?
আমি কিছুই বলবো না৷
আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকা সারি সারি চোখের ভিতরে
বাংলার বিভিন্ন ভবিষ্য়্ত্কে চেয়ে চেয়ে দেখবো৷
উত্কন্ঠিত চোখে চোখে নামবে কালো অন্ধকার, আমি চিত্কার করে
কন্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার জ্বালা মুছে নিয়ে বলবো:
" আমি এসবের কিছুই জানি না,
আমি এসবের কিছুই বুঝি না৷'
(প্রেমাংশুর রক্ত চাই, ১৯৭০ )
আমার জন্ম
আমার জন্ম
নির্মলেন্দু গুণ
-----------
তপ শেষে যখন বাল্মীকি তাঁর মুদিত নয়ন
খুলিলেন, দেখিলেন লব নেই; চোখের সমুখে
দিগন্তবিস্তৃত ধু-ধু শূন্য তপোবন প'ড়ে আছে৷
"কোথা লব, কোথা লব? ফিরে আয়৷' ডাকিলেন মুনি,
ফিরে এলো প্রতিধ্বনি, শিশু লব দিলো না উত্তর৷
এ কোন্ বিধির লীলা, ভাবিলেন চিন্তক্লীষ্ট মুনি:
" শুন্য হাতে কী মুখে যাইব আজ সেই পূণ্যাশ্রমে,
-- যেখানে অকল্পনীয় লব-হীন সীতার জীবন৷
যোগসিদ্ধ ঋষি তিনি, দৈববিদ্যা করায়ত্ত তাঁর,
যদি সেই তপলব্ধ দৈবজ্ঞান করিলে প্রয়োগ
মাতৃকোল পূর্ণ হয়, তৃপ্ত করে সীতার হদৃয়--
তবে তাই হোক--, মহামন্ত্রে জন্ম নিল দেবশিশু৷
পেলো প্রাণ-চঞ্চলতা অবিকল লবের মতোন৷
যেহেতু নির্মিত কুশে, তার নাম রাখা হলো কুশ৷
না আমি নির্মিত নই বাল্মীকির কাল্পনিক কুশে,
আমাকে দিয়েছে জন্ম রক্তঝরা অমর একুশে৷
(পৃথিবীজোড়া গান, ১৯৮২)
নির্মলেন্দু গুণ
-----------
তপ শেষে যখন বাল্মীকি তাঁর মুদিত নয়ন
খুলিলেন, দেখিলেন লব নেই; চোখের সমুখে
দিগন্তবিস্তৃত ধু-ধু শূন্য তপোবন প'ড়ে আছে৷
"কোথা লব, কোথা লব? ফিরে আয়৷' ডাকিলেন মুনি,
ফিরে এলো প্রতিধ্বনি, শিশু লব দিলো না উত্তর৷
এ কোন্ বিধির লীলা, ভাবিলেন চিন্তক্লীষ্ট মুনি:
" শুন্য হাতে কী মুখে যাইব আজ সেই পূণ্যাশ্রমে,
-- যেখানে অকল্পনীয় লব-হীন সীতার জীবন৷
যোগসিদ্ধ ঋষি তিনি, দৈববিদ্যা করায়ত্ত তাঁর,
যদি সেই তপলব্ধ দৈবজ্ঞান করিলে প্রয়োগ
মাতৃকোল পূর্ণ হয়, তৃপ্ত করে সীতার হদৃয়--
তবে তাই হোক--, মহামন্ত্রে জন্ম নিল দেবশিশু৷
পেলো প্রাণ-চঞ্চলতা অবিকল লবের মতোন৷
যেহেতু নির্মিত কুশে, তার নাম রাখা হলো কুশ৷
না আমি নির্মিত নই বাল্মীকির কাল্পনিক কুশে,
আমাকে দিয়েছে জন্ম রক্তঝরা অমর একুশে৷
(পৃথিবীজোড়া গান, ১৯৮২)
স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
নির্মলেন্দু গুণ
----------------------------------------
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: " কখন আসবে কবি?'
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি?
জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ ... ৷
হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প৷
সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর৷
না পার্ক না ফুলের বাগান, -- এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়৷
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে৷
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক৷
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে
আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে৷
একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: "কখন আসবে কবি?' "কখন আসবে কবি?'
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷"
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের৷
( চাষাভুষার কাব্য, ১৯৮১ )
নির্মলেন্দু গুণ
----------------------------------------
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: " কখন আসবে কবি?'
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি?
জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ ... ৷
হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প৷
সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর৷
না পার্ক না ফুলের বাগান, -- এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়৷
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে৷
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক৷
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে
আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে৷
একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: "কখন আসবে কবি?' "কখন আসবে কবি?'
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷"
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের৷
( চাষাভুষার কাব্য, ১৯৮১ )
Monday, May 01, 2006
কবিতা - ১২
আমি তোমাকে এত বেশি সপ্ন দেখেছি যে তুমি
তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছো
এখনো কি সময় আছে তোমার জীবন্ত শরীর স্পর্শ করার
এবং যে ওষ্ঠ থেকে আমার অতি প্রিয় সর জন্ম নেয়
সেখানে চুম্বন দেবার?......
আমি তোমাকে এত বেশি সপ্ন দেখেছি যে হয়তো
আমার পক্ষে আর জাগাই সম্ভব হবে না
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাই,আমার শরীর সব
রকম জীবন ও ভালোবাসার জন্য উন্মুক্ত.......
আমি তোমার ভুরু ছুঁতে পারি,ওষ্ঠ ছুঁতে পারি এত কম......
আমি তোমাকে এত বেশি সপ্ন দেখেছি,হেঁটেছি,
কথা বলেছি।
শুয়েছি তোমার ছায়ার সঙ্গে...............
************************************
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "ছবির দেশে,কবিতার দেশে" বইতে পেয়েছিলাম এই কবিতাটা। রোবেয়ার দেনো-এর লিখা আর সুনীলের চমৎকার অনুবাদ।আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতার অন্যতম কবিতা হচ্ছে এটা...।
তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছো
এখনো কি সময় আছে তোমার জীবন্ত শরীর স্পর্শ করার
এবং যে ওষ্ঠ থেকে আমার অতি প্রিয় সর জন্ম নেয়
সেখানে চুম্বন দেবার?......
আমি তোমাকে এত বেশি সপ্ন দেখেছি যে হয়তো
আমার পক্ষে আর জাগাই সম্ভব হবে না
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাই,আমার শরীর সব
রকম জীবন ও ভালোবাসার জন্য উন্মুক্ত.......
আমি তোমার ভুরু ছুঁতে পারি,ওষ্ঠ ছুঁতে পারি এত কম......
আমি তোমাকে এত বেশি সপ্ন দেখেছি,হেঁটেছি,
কথা বলেছি।
শুয়েছি তোমার ছায়ার সঙ্গে...............
************************************
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "ছবির দেশে,কবিতার দেশে" বইতে পেয়েছিলাম এই কবিতাটা। রোবেয়ার দেনো-এর লিখা আর সুনীলের চমৎকার অনুবাদ।আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতার অন্যতম কবিতা হচ্ছে এটা...।
কবিতা - ১১
মন ভালো নেই
মহাদেব সাহা
-------------
বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই,
মন ভালো নেই;
ফাঁকা রাস্তা, শূন্য বারান্দা
সারাদিন ডাকি সাড়া নেই,
একবার ফিরেও চায় না কেউ
পথ ভুল করে চলে যায়,এদিকে আসে না
আমি কি সহস্র বর্ষ এভাবে
তাকিয়ে থাকব শূণ্যতার দিকে?
এই শুন্য ঘরে, এই নির্বাসনে
কতোকাল,আর কতোকাল !
আজ দুঃখ ছুঁয়েছে ঘরবাড়ি,
উদ্যানে উঠেছে ক্যাকটাস -
কেউ নেই, কড়া নাড়ার মতো কেউ নেই,
শুধু শূণ্যতার এই দীর্ঘশাস, এই দীর্ঘ পদধনি।
টেলিফোন ঘোরাতে ঘোরাতে আমি ক্লান্ত
ডাকতে ডাকতে একশেষ;
কেউ ডাক শোনে না, কেউ ফিরে তাকায় না
এই হিমঘরে ভাঙ্গা চেয়ারে একা বসে আছি।
এ কী শাস্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো ঈশর,
এভাবে দগ্ধ হওয়ার নাম কি বেঁচে থাকা !
তবু মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, আমি বেঁচে থাকতে চাই
আমি ভালোবাসতে চাই, পাগলের মতো
ভালোবাসতে চাই -
এই কি আমার অপরাধ !
আজ বিষাদ ছুঁয়েছে বুক, বিষাদ ছুঁয়েছে বুক
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই;
তোমার আসার কথা ছিলো, তোমার যাওয়ার
কথা ছিলো -
আসা-যাওয়ার পথের ধারে
ফুল ফোটানোর কথা ছিলো
সেসব কিছুই হলো না, কিছুই হলো না;
আমার ভেতরে শুধু এক কোটি বছর ধরে অশ্রুপাত
শুধু হাহাকার
শুধু শূণ্যতা, শূণ্যতা ।
তোমার শূণ্য পথের দিকে তাকাতে তাকাতে
দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেলো,
সব নদীপথ বন্ধ হলো, তোমার সময় হলো না -
আজ সারাদিন বিষাদপর্ব,সারাদিন তুষারপাত...
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই ।
মহাদেব সাহা
-------------
বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই,
মন ভালো নেই;
ফাঁকা রাস্তা, শূন্য বারান্দা
সারাদিন ডাকি সাড়া নেই,
একবার ফিরেও চায় না কেউ
পথ ভুল করে চলে যায়,এদিকে আসে না
আমি কি সহস্র বর্ষ এভাবে
তাকিয়ে থাকব শূণ্যতার দিকে?
এই শুন্য ঘরে, এই নির্বাসনে
কতোকাল,আর কতোকাল !
আজ দুঃখ ছুঁয়েছে ঘরবাড়ি,
উদ্যানে উঠেছে ক্যাকটাস -
কেউ নেই, কড়া নাড়ার মতো কেউ নেই,
শুধু শূণ্যতার এই দীর্ঘশাস, এই দীর্ঘ পদধনি।
টেলিফোন ঘোরাতে ঘোরাতে আমি ক্লান্ত
ডাকতে ডাকতে একশেষ;
কেউ ডাক শোনে না, কেউ ফিরে তাকায় না
এই হিমঘরে ভাঙ্গা চেয়ারে একা বসে আছি।
এ কী শাস্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো ঈশর,
এভাবে দগ্ধ হওয়ার নাম কি বেঁচে থাকা !
তবু মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, আমি বেঁচে থাকতে চাই
আমি ভালোবাসতে চাই, পাগলের মতো
ভালোবাসতে চাই -
এই কি আমার অপরাধ !
আজ বিষাদ ছুঁয়েছে বুক, বিষাদ ছুঁয়েছে বুক
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই;
তোমার আসার কথা ছিলো, তোমার যাওয়ার
কথা ছিলো -
আসা-যাওয়ার পথের ধারে
ফুল ফোটানোর কথা ছিলো
সেসব কিছুই হলো না, কিছুই হলো না;
আমার ভেতরে শুধু এক কোটি বছর ধরে অশ্রুপাত
শুধু হাহাকার
শুধু শূণ্যতা, শূণ্যতা ।
তোমার শূণ্য পথের দিকে তাকাতে তাকাতে
দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেলো,
সব নদীপথ বন্ধ হলো, তোমার সময় হলো না -
আজ সারাদিন বিষাদপর্ব,সারাদিন তুষারপাত...
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই ।
Sunday, April 30, 2006
রচনা রবীন্দ্রনাথ
একটি আবৃত্তির লিংক তুললাম নীচে।
আমার খুব প্রিয় একটি আবৃত্তি। শিমুল মুস্তাফার কন্ঠে, রচনা রবীন্দ্রনাথ। সুনেত্রা ঘটক -এর লেখা। এটা মনে হয় ঠিক কবিতা নয়, কবিতার মত নরম, কিন্তু কবিতা নয়।
-:রচনা রবীন্দ্রনাথ :-
রবীন্দ্রনাথ-কে নিয়ে লেখা এর চেয়ে সুন্দর কিছু আমি এখন পর্যন্ত পড়িনি। অথবা বলা যায়- শুনিনি।
ইচ্ছে ছিল- পুরোটা লিখে তুলে দিব, কিন্তু পরে মনে হলো- তাহলে শিমুলের আবৃত্তি শোনানো হবে না!
তাই তুলে দিলাম পুরোটাই।
আমার খুব প্রিয় একটি আবৃত্তি। শিমুল মুস্তাফার কন্ঠে, রচনা রবীন্দ্রনাথ। সুনেত্রা ঘটক -এর লেখা। এটা মনে হয় ঠিক কবিতা নয়, কবিতার মত নরম, কিন্তু কবিতা নয়।
-:রচনা রবীন্দ্রনাথ :-
রবীন্দ্রনাথ-কে নিয়ে লেখা এর চেয়ে সুন্দর কিছু আমি এখন পর্যন্ত পড়িনি। অথবা বলা যায়- শুনিনি।
ইচ্ছে ছিল- পুরোটা লিখে তুলে দিব, কিন্তু পরে মনে হলো- তাহলে শিমুলের আবৃত্তি শোনানো হবে না!
তাই তুলে দিলাম পুরোটাই।
কবিতা - ৯
কিসের এমন প্রেরণা পেয়েছে মন
নষ্ট আঁধারে শ্রেষ্ঠ বাসনা খোঁজে।
বুকের অসুখে সুখের সপ্ন লিখে
ঘন দুর্যোগ
তবু সে ভাসায় বেহুলার সাম্পান...
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতা "বেহুলার সাম্পান"-এর অংশ।
নষ্ট আঁধারে শ্রেষ্ঠ বাসনা খোঁজে।
বুকের অসুখে সুখের সপ্ন লিখে
ঘন দুর্যোগ
তবু সে ভাসায় বেহুলার সাম্পান...
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতা "বেহুলার সাম্পান"-এর অংশ।
Thursday, April 27, 2006
২৫ শে বৈশাখ নিয়ে কবিতা
একটা ভীষন সুন্দর কবিতা পড়লাম আজ। বাংলালাইভের মজলিশে। কবিতার নাম ছিল না, কবির নাম নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এই কবিতাটির কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি "R " - নামের কোন একজনের প্রতি।
কবিতাটি তুলে দিলাম নীচে।
----------------------------------------
একটি গাছে রোজ সকালে ঠিক দুখানি ফুল,
একটি গাছে রোজ সকালে হিসেবটা নির্ভুল।
ঠিক দুখানি ফুল, ফুটবেনা এর বেশি,
একটি নেবে সুদর্শনা , অন্যটা উর্বশী।
ঠিক দুখানি ফুল, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবনে আশ্বিনে ,
কার্তিকে আর ফাল্গুনে বা ভাদ্র মাসের দিনে।
কিন্তু ধরো, হঠাৎ যদি পঁচিশে বৈশাখে,
সেই সে গাছে ফুল দুটি নয় তিনটে ফুটে থাকে;
সুদর্শনা - উর্বশী তার ভাগ করেছে ঠিক-
একটি -দুটি-তিনটি ফুলই রবীন্দ্রনাথ নিক।
এই কবিতাটির কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি "R " - নামের কোন একজনের প্রতি।
কবিতাটি তুলে দিলাম নীচে।
----------------------------------------
একটি গাছে রোজ সকালে ঠিক দুখানি ফুল,
একটি গাছে রোজ সকালে হিসেবটা নির্ভুল।
ঠিক দুখানি ফুল, ফুটবেনা এর বেশি,
একটি নেবে সুদর্শনা , অন্যটা উর্বশী।
ঠিক দুখানি ফুল, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবনে আশ্বিনে ,
কার্তিকে আর ফাল্গুনে বা ভাদ্র মাসের দিনে।
কিন্তু ধরো, হঠাৎ যদি পঁচিশে বৈশাখে,
সেই সে গাছে ফুল দুটি নয় তিনটে ফুটে থাকে;
সুদর্শনা - উর্বশী তার ভাগ করেছে ঠিক-
একটি -দুটি-তিনটি ফুলই রবীন্দ্রনাথ নিক।
Monday, April 24, 2006
কবিতা ৮ - আগ্নেয়াস্ত্র
আগ্নেয়াস্ত্র
নির্মলেন্দু গুণ
-------------
পুলিশ স্টেশনে ভিড়, আগ্নেয়াস্ত্র জমা নিচ্ছে শহরের
সন্দিগ্ধ সৈনিক৷ সামরিক নির্দেশে ভীত মানুষের
শটগান, রাইফেল, পিস্তল এবং কার্তুজ, যেন দরগার
স্বীকৃত মানত্; টেবিলে ফুলের মত মস্তানের হাত৷
আমি শুধু সামরিক আদেশ অমান্য করে হয়ে গেছি
কোমল বিদ্রোহী, প্রকাশ্যে ফিরছি ঘরে,
অথচ আমার সঙ্গে হৃদয়ের মতো মারাত্মক
একটি আগ্নেয়াস্ত্র, আমি জমা দিই নি৷
(প্রেমাংশুর রক্ত চাই, ১৯৭০)
নির্মলেন্দু গুণ
-------------
পুলিশ স্টেশনে ভিড়, আগ্নেয়াস্ত্র জমা নিচ্ছে শহরের
সন্দিগ্ধ সৈনিক৷ সামরিক নির্দেশে ভীত মানুষের
শটগান, রাইফেল, পিস্তল এবং কার্তুজ, যেন দরগার
স্বীকৃত মানত্; টেবিলে ফুলের মত মস্তানের হাত৷
আমি শুধু সামরিক আদেশ অমান্য করে হয়ে গেছি
কোমল বিদ্রোহী, প্রকাশ্যে ফিরছি ঘরে,
অথচ আমার সঙ্গে হৃদয়ের মতো মারাত্মক
একটি আগ্নেয়াস্ত্র, আমি জমা দিই নি৷
(প্রেমাংশুর রক্ত চাই, ১৯৭০)
Saturday, April 22, 2006
কবিতা ৭- যাত্রা- ভঙ্গ
যাত্রা- ভঙ্গ
নির্মলেন্দু গুণ
-----------
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে,
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই৷
হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন করে যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি৷
তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই৷
তখন আমি একটু ছোঁব,
হাত বাড়িয়ে জাড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরনী নায়ে৷
নায়ের মাঝে বসব বটে,
না-এর মাঝে শোব৷
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ,
দু:খ দিয়ে ছোঁব৷
তুই কেমন করে যাবি?
(আনন্দ কুসুম , ১৯৭৬ )
নির্মলেন্দু গুণ
-----------
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে,
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই৷
হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন করে যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি৷
তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই৷
তখন আমি একটু ছোঁব,
হাত বাড়িয়ে জাড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরনী নায়ে৷
নায়ের মাঝে বসব বটে,
না-এর মাঝে শোব৷
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ,
দু:খ দিয়ে ছোঁব৷
তুই কেমন করে যাবি?
(আনন্দ কুসুম , ১৯৭৬ )
Thursday, April 20, 2006
কবিতা ৬ - মানুষ
মানুষ
নির্মলেন্দু গুণ
--------------------
আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়;
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়৷
আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি৷
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না৷
কী করে তাও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি, সকালবেলা,
দুপুরবেলা অবাক করে সারাটা দিন বেঁচেই আছি
আমার মতো৷ অবাক লাগে৷
আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো,
বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো,
রাত্রি বেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো,
পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো৷
আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে আকাষ দেখে হাসবো কেন?
মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে, নাক থাকবে,
তোমার মতো চোখ থাকবে,
নিকেল মাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে৷
ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে৷
মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো,
চোখের মধ্যে অভিমানের রাগ থাকতো,
বাবা থাকতো, বোন থাকতো,
ভালোবাসার লোক থাকতো,
হঠাত্ করে মরে যাবার ভয় থাকতো৷
আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা
আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত
বেঁচে-থাকাটা আর হতো না৷
মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়;
অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,
অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি৷
(কাব্যগ্রন্থ - প্রেমাংশুর রক্ত চাই, প্রথম প্রকাশ ১৯৭০ )
নির্মলেন্দু গুণ
--------------------
আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়;
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়৷
আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি৷
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না৷
কী করে তাও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি, সকালবেলা,
দুপুরবেলা অবাক করে সারাটা দিন বেঁচেই আছি
আমার মতো৷ অবাক লাগে৷
আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো,
বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো,
রাত্রি বেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো,
পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো৷
আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে আকাষ দেখে হাসবো কেন?
মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে, নাক থাকবে,
তোমার মতো চোখ থাকবে,
নিকেল মাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে৷
ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে৷
মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো,
চোখের মধ্যে অভিমানের রাগ থাকতো,
বাবা থাকতো, বোন থাকতো,
ভালোবাসার লোক থাকতো,
হঠাত্ করে মরে যাবার ভয় থাকতো৷
আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা
আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত
বেঁচে-থাকাটা আর হতো না৷
মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়;
অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,
অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি৷
(কাব্যগ্রন্থ - প্রেমাংশুর রক্ত চাই, প্রথম প্রকাশ ১৯৭০ )
উপন্যাস-কোয়েলের কাছে
হাজার হাজার বছর ধরে আমরা প্রকৃতির সঙ্গে বিপরীতমুখী ছুটে , তার সঙ্গে লড়াই করে যে পার্থক্য অর্জন করেছি, তার গালভরা নাম দিয়েছি সভ্যতা।ঐসব নির্জন নিরালা মুহুর্তে আমার মনে হোত, এই সভ্যতার সত্যিকারের আবরণটি এখনও যথেষ্ট পুরু হয়নি এই এত বছরেও। প্রকৃতির মধ্যে এলেই ঠুনকো আবরণটি খসে যেতে চায়।তখন বোধহয় ভিতরের নগ্ন প্রাকৃত ও সত্যি - আমি বেরিয়ে পড়ে- যে সত্য রূপকে আমরা ভয় পাই।
-----------------------------------
বুদ্ধদেব গুহ'র "কোয়েলের কাছে" ভীষন প্রিয় উপন্যাস আমার। সেখান থেকেই এই অংশ টুকু তুলেছি ।বুদ্ধদেবের লিখার মজাই হচ্ছে প্রকৃতির বর্ণনা। যারা ঘটনার চাইতেও এই দারুণ বর্ণনা উপভোগ করেন বেশি, তারাই বোধ করি বেশি ভালোবাসেন বুদ্ধদেবের লিখা। আমার নিজের ভীষণ ভালো লাগে যখন তার উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে তিনি প্রকৃতির সামনে এনে সত্যিকারের "আমি"এর মুখোমুখি করিয়ে দেন।প ড়তে পড়তে আমিও মাঝে মাঝে ভাবি,সত্যি এরকম নিবিড় করে প্রকৃতির সংস্পর্শে তো কখনও যাই নি। ভীষন ইচ্ছা করে নিজেকে ওখানটায় দাঁড় করাতে...দেখতে আমার ভেতর থেকে আসলে কোন আমি বেরিয়ে আসে !
-----------------------------------
বুদ্ধদেব গুহ'র "কোয়েলের কাছে" ভীষন প্রিয় উপন্যাস আমার। সেখান থেকেই এই অংশ টুকু তুলেছি ।বুদ্ধদেবের লিখার মজাই হচ্ছে প্রকৃতির বর্ণনা। যারা ঘটনার চাইতেও এই দারুণ বর্ণনা উপভোগ করেন বেশি, তারাই বোধ করি বেশি ভালোবাসেন বুদ্ধদেবের লিখা। আমার নিজের ভীষণ ভালো লাগে যখন তার উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে তিনি প্রকৃতির সামনে এনে সত্যিকারের "আমি"এর মুখোমুখি করিয়ে দেন।প ড়তে পড়তে আমিও মাঝে মাঝে ভাবি,সত্যি এরকম নিবিড় করে প্রকৃতির সংস্পর্শে তো কখনও যাই নি। ভীষন ইচ্ছা করে নিজেকে ওখানটায় দাঁড় করাতে...দেখতে আমার ভেতর থেকে আসলে কোন আমি বেরিয়ে আসে !
Wednesday, April 19, 2006
কবিতা ৫- সুন্দর
সুন্দর
নির্মলেন্দু গুণ
-------
সুন্দর এসে থেমে গেছে তার
নাসিকার শেষ প্রান্তে ।
নাকপাশা যেন সোনা দিয়ে মোড়া ,
ঘুঘু চোখ ঘুমে বুদ ।
অথবা শীতের পিপড়ের মুখে
আলতা মাখান খুদ ।
আমার জীবন যাবে আজীবন
তোমার জীবন জানতে।
নির্মলেন্দু গুণ
-------
সুন্দর এসে থেমে গেছে তার
নাসিকার শেষ প্রান্তে ।
নাকপাশা যেন সোনা দিয়ে মোড়া ,
ঘুঘু চোখ ঘুমে বুদ ।
অথবা শীতের পিপড়ের মুখে
আলতা মাখান খুদ ।
আমার জীবন যাবে আজীবন
তোমার জীবন জানতে।
Tuesday, April 18, 2006
কবিতা ৪-পরানের গহীন ভিতর
পরানের গহীন ভিতর
সৈয়দ শামসুল হক
-------------
জামার ভিতর থিকা যাদুমন্ত্রে বারায় ডাহুক,
চুলের ভিতর থিকা আকবর বাদশার মোহর,
মানুষ বেকুব চুপ,হাটবারে সকলে দেখুক
কেমন মোচর আদিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর ৷
চক্ষের ভিতর থিকা সোহাগের পাখিরে উড়াও,
বুকের ভিতর থিকা পিরীতের পূর্ণিমার চান,
নিজেই তাজ্জব তুমি - একদিকে যাইবার চাও
অথচ আরেক দিকে খুব জোরে দেয় কেউ টান৷
সে তোমার পাওনার এতটুকু পরোয়া করে না,
খেলা যে দেখায় তার দ্যাখানের ইচ্ছায় দেখায়,
ডাহুক উড়ায়া দিয়া তারপর আবার ধরে না,
সোনার মোহর তার পড়া থাকে পথের ধূলায় ৷
এ বড় দারুন বাজি,তারে কই বড় বাজিকর
যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর ৷
সৈয়দ শামসুল হক
-------------
জামার ভিতর থিকা যাদুমন্ত্রে বারায় ডাহুক,
চুলের ভিতর থিকা আকবর বাদশার মোহর,
মানুষ বেকুব চুপ,হাটবারে সকলে দেখুক
কেমন মোচর আদিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর ৷
চক্ষের ভিতর থিকা সোহাগের পাখিরে উড়াও,
বুকের ভিতর থিকা পিরীতের পূর্ণিমার চান,
নিজেই তাজ্জব তুমি - একদিকে যাইবার চাও
অথচ আরেক দিকে খুব জোরে দেয় কেউ টান৷
সে তোমার পাওনার এতটুকু পরোয়া করে না,
খেলা যে দেখায় তার দ্যাখানের ইচ্ছায় দেখায়,
ডাহুক উড়ায়া দিয়া তারপর আবার ধরে না,
সোনার মোহর তার পড়া থাকে পথের ধূলায় ৷
এ বড় দারুন বাজি,তারে কই বড় বাজিকর
যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর ৷
Monday, April 17, 2006
অনু কবিতা
আছি ,
বড্ড জানান দিতে ইচ্ছে করে, আছি।
মনে ও মননে গুনগুন করে প্রণয়ের মৌমাছি ।
--------------------------
হেলাল হাফিজের কবিতা ৷ শিরোনাম ভুলে গেছি ৷ কবে কোথায় পড়েছিলাম তাও মনে পড়ে না ৷ শুধু কখনও প্রিয়জনকে কোন কারনে
" আছি " বললেই যেন-- মনের মাঝে গুনগুন করে প্রণয়ের মৌমাছি --!
কবির নাম এবং কবিতাও ভুল লিখেছিলাম, ঠিক করে দিলাম।
বড্ড জানান দিতে ইচ্ছে করে, আছি।
মনে ও মননে গুনগুন করে প্রণয়ের মৌমাছি ।
--------------------------
হেলাল হাফিজের কবিতা ৷ শিরোনাম ভুলে গেছি ৷ কবে কোথায় পড়েছিলাম তাও মনে পড়ে না ৷ শুধু কখনও প্রিয়জনকে কোন কারনে
" আছি " বললেই যেন-- মনের মাঝে গুনগুন করে প্রণয়ের মৌমাছি --!
কবির নাম এবং কবিতাও ভুল লিখেছিলাম, ঠিক করে দিলাম।
কবিতা ৩ - উট্পাখি
উট্পাখি
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
আমার কথা কি শুনতে পাও না তুমি?
কেন মুখ গুঁজে আছো তবে মিছে ছলে?
কোথায় লুকোবে?ধু-ধু করে মরুভূমি ;
ক্ষ 'য়ে ক্ষ'য়ে ছায়া ম'রে গেছে পদতলে ৷
আজ দিগন্তে মরীচিকাও যে নেই ;
নির্বাক,নীল,নির্মম মহাকাশ!
নিষাদের মন মায়ামৃগে ম'জে নেই
তুমি বিনা তার সমূহ সর্বনাশ ৷
কোথায় পালাবে? ছুটবে বা আর কত?
উদাসীন বালি ঢাকবে না পদরেখা ৷
প্রাকপুরাণিক বাল্যবন্ধু যত
বিগত সবাই ,তুমি অসহায় একা ৷৷
(*******************)
(শেষের অংশ)
আমি জানি এই ধ্বংসের দায়ভাগে
আমরা দুজনে সমান অংশীদার ;
অপরে পাওনা আদায় করেছে আগে,
আমাদের 'পরে দেনা শোধাবার ভার ৷
তাই অসহ্য লাগে ও-আত্মরতি ৷
অন্ধ হ'লে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
আমাকে এড়িয়ে বাড়াও নিজেরই ক্ষতি ৷
ভ্রান্তিবিলাস সাজে না দুর্বিপাকে ৷
অতএব এসো আমরা সন্ধি ক'রে
প্রত্যুপকারে বিরোধী স্বার্থ সাধি :
তুমি নিয়ে চল আমাকে লোকান্তরে,
তোমাকে বন্ধু আমি লোকায়তে বাঁধি ৷৷
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
আমার কথা কি শুনতে পাও না তুমি?
কেন মুখ গুঁজে আছো তবে মিছে ছলে?
কোথায় লুকোবে?ধু-ধু করে মরুভূমি ;
ক্ষ 'য়ে ক্ষ'য়ে ছায়া ম'রে গেছে পদতলে ৷
আজ দিগন্তে মরীচিকাও যে নেই ;
নির্বাক,নীল,নির্মম মহাকাশ!
নিষাদের মন মায়ামৃগে ম'জে নেই
তুমি বিনা তার সমূহ সর্বনাশ ৷
কোথায় পালাবে? ছুটবে বা আর কত?
উদাসীন বালি ঢাকবে না পদরেখা ৷
প্রাকপুরাণিক বাল্যবন্ধু যত
বিগত সবাই ,তুমি অসহায় একা ৷৷
(*******************)
(শেষের অংশ)
আমি জানি এই ধ্বংসের দায়ভাগে
আমরা দুজনে সমান অংশীদার ;
অপরে পাওনা আদায় করেছে আগে,
আমাদের 'পরে দেনা শোধাবার ভার ৷
তাই অসহ্য লাগে ও-আত্মরতি ৷
অন্ধ হ'লে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
আমাকে এড়িয়ে বাড়াও নিজেরই ক্ষতি ৷
ভ্রান্তিবিলাস সাজে না দুর্বিপাকে ৷
অতএব এসো আমরা সন্ধি ক'রে
প্রত্যুপকারে বিরোধী স্বার্থ সাধি :
তুমি নিয়ে চল আমাকে লোকান্তরে,
তোমাকে বন্ধু আমি লোকায়তে বাঁধি ৷৷
Sunday, April 16, 2006
কবিতা ২- রজনীগন্ধা
রজনীগন্ধা
জীবনানন্দ দাশ
----------------
এখন রজনীগন্ধা -- প্রথম -- নতুন--
একটি নক্ষত্র শুধু বিকেলের সমস্ত আকাশে;
অন্ধকার ভালো বলে শান্ত পৃথিবীর
আলো নিভে আসে৷
অনেক কাজের পরে এইখানে থেমে থাকা ভালো;
রজনীগন্ধার ফুলে, মৌমাছির কাছে ৷
কেউ নেই, কিছু নেই,তবু মুখোমুখি
এক আশাতীত ফুল আছে ৷
*************************
সবচে' ভালো - বলে কিছু আছে আমি বিশ্বাস করি না৷
তবু কেউ যদি কখনো জিজ্ঞেস করে, কোন কবিতা আমার সবচে' ভালো লাগে- আমি এই কবিতার কথাই বলবো৷
জীবনানন্দ দাশ
----------------
এখন রজনীগন্ধা -- প্রথম -- নতুন--
একটি নক্ষত্র শুধু বিকেলের সমস্ত আকাশে;
অন্ধকার ভালো বলে শান্ত পৃথিবীর
আলো নিভে আসে৷
অনেক কাজের পরে এইখানে থেমে থাকা ভালো;
রজনীগন্ধার ফুলে, মৌমাছির কাছে ৷
কেউ নেই, কিছু নেই,তবু মুখোমুখি
এক আশাতীত ফুল আছে ৷
*************************
সবচে' ভালো - বলে কিছু আছে আমি বিশ্বাস করি না৷
তবু কেউ যদি কখনো জিজ্ঞেস করে, কোন কবিতা আমার সবচে' ভালো লাগে- আমি এই কবিতার কথাই বলবো৷
Wednesday, April 12, 2006
কবিতা ১ - আমার বন্ধু নিরঞ্জন ৷
আমার বন্ধু নিরঞ্জন ৷
- ভাস্কর চৌধুরি
------------------------
অনেক কথা বলবার আছে আমার
তবে সবার আগে নিরঞ্জনের কথা বলতে হবে আমাকে ৷
নিরঞ্জন আমার বন্ধুর নাম
আর কোন নাম ছিল কি তার ?
আমি জানতাম না ৷
ওর একজন বান্ধবী ছিল
অবশ্য কিছুদিনের জন্য সে তাকে প্রীতম বলে ডাকত ৷
ওর বান্ধবীর নাম ছিলো জয়লতা ৷
নিরঞ্জন জয়লতা সম্পর্কে আমাকে কিছু বলেনি তেমোন ৷
জয়লতাকে কখনো কোন চিঠি লিখেছিলো কিনা
সে কথাও আমাকে সে বলেনি ৷
তবে জয়লতার চিঠি আমি দেখেছি
একটা চিঠি ছিল এরকম -
প্রীতম,
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ৷ তুমি বলেছ , এখন দু:সময় -
কিন্তু আমি জানি , সব সময়ই সুসময় , যদি কেউ ব্যবহার করতে জানে তাকে ৷
আমি বুঝি বেশি দিন নেই ৷
যদি পার এক্ষুনি তুলে নাও
নইলে অন্য পূরুষ ছিবড়ে খাবে আমাকে -
আমার ঘরে বসে সিগারেট টানতে টানতে
নিরঞ্জন চিঠিটা চুপ করে এগিয়ে দিয়ে বলেছিল
"বিভূ, চিঠিটা পড়ুন ৷"
আমি প্রথমে পড়তে চাইনি ৷
পরে ঐটুকু পড়ে তার দিকে তাকিয়েছিলাম --
না - ঐ সিগারেটের ধুয়োয়
আমি কোন নারী প্রেম-তাড়িত মানুষের ছায়া দেখিনি -
ভয়ানক নির্বিকার ৷
কিছু বলছেন না যে ?- আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম
কি বলব ?
এই ব্যাপারে ৷
কোন ব্যাপারে ?
এই যে জয়লতা ৷
বাদ দিন ৷
আমি বাদ দিয়েছিলাম ৷
নিরঞ্জন আমার ঘরে বসে অনেকক্ষণ সিগারেট
টেনে টেনে ঘরটাকে অন্ধকার করে চলে গিয়েছিল সেদিন ৷
জয়লতার সংগে অন্য পূরুষের বিয়ে হয়েছিল ৷
আমি জয়লতা এবং অন্য পূরুষটিকে দেখেছি বহুবার
বিশ্ববিদ্যালয়েই ৷
জয়লতা আরো দেমাগী আরো সুন্দরী হয়ে উঠেছিল৷
অন্য পূরুষ ছিবড়ে খেলে মেয়েরা বুঝি
আরো সুন্দরী হতে থাকে ?
এ কথার সূত্রে নিরঞ্জন আমাকে বলেছিল ,
" মানুষকে এত ক্ষুদ্রার্থে নেবেন না ৷
মানুষ এত বড় যে ,
আপনি যদি 'মানুষ ' শব্দটি একবার উচ্চারণ করেন
যদি অন্তর থেকে করেন উচ্চারণ
যদি বোঝেন এবং উচ্চারণ করেন ' মানুষ' -
তো আপনি কাঁদবেন ৷
আমি মানুষের পক্ষে , মানুষের সন্গে এবং মানুষের জন্যে ৷
হ্যাঁ , মানুষের মুক্তির জন্য নিরঞ্জন মিছিল করতো
আমি শুনেছি নিরঞ্জন বলছে
তুমি দুষ্কৃতি মারো , বান্গালী মারো ,
হিন্দু-মুসলমান মারো , গেরিলা - তামিল মারো ,
এভাবে যেখানে যাকেই মারো না কেন
ইতিহাস লিখবে যে এত মানুষ মরেছে ৷
বড়ই করুণ এবং বড়ই দু:খজনক
শক্তির স্বপক্ষে তুমি যারই মৃত্যু উল্লেখ করে
উল্লাস কর না কেন
মনে রেখো মানুষই মরেছে ৷
এই ভয়ংকর সত্য কথা নিরঞ্জন বলেছিল
মিছিলে হাত উঠিয়ে বলেছিল ,
এভাবে মানুষ মারা চলবে না ৷
মানুষকে বাঁচতে দাও ৷
তার উদ্যত হাতে লেগেছিল
মানুষের হাতে বানানো বন্দুকের গুলি ৷
বুকেও লেগেছিল-
যেখান থেকে " মানুষ ' শব্দটি
বড় পবিত্রতায় বেরিয়ে আসতো ৷
সে লাশ --
আমার বন্ধু নিরঞ্জনের লাশ -
আমি দেখেছি -
রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন লাশ ,
মানুষ কাঁধে করে
তাকে বয়ে এনেছিল মানুষের কাছে ৷
জয়লতা সে লাশ দেখেছিল কিনা
সে প্রশ্ন উঠছে না ৷
দেখলেও যদি কেঁদে থাকে সে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে ,
তাতে নিরঞ্জনের কোন লাভ হয়নি ৷
মানুষ কেঁদেছিল
আমি জানি , তাতে নিরঞ্জনের লাভ ছিল ৷
নিরঞ্জন প্রমাণ করতে পেরেছিল
গতকাল মিছিলে
আইন অমান্যের অভিযোগে
যে দুষ্কৃতি মারা গিয়েছে
তার নাম নিরঞ্জন --
সে আসলে " মানুষ" ৷
************************
কবিতা পড়তে ভালো লাগে , নির্দ্বিধায় স্বীকার করি , আবৃত্তি শুনতে আরো বেশি ভাল লাগে আমার ৷
এই কবিতাটি , আমার ভীষন সৌভাগ্য যে , প্রথম শুনেছিলাম আমাদের দেশের একজন দারুন আবৃত্তিকার - মাহিদুল ইসলামের গলায় ৷
এক অলস বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি.এস.সি-র সামনে বসে বসে মাইকে তার উদাত্ত গলায় আবৃত্তি শুনে কখন যে জ্বলজ্বলে চোখে বসা থেকে উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছি , নিজেই বুঝতে পারিনি ৷
এখনো , প্রতিবার যখন কবিতাটি পড়ি , " যদি বোঝেন এবং উচ্চারন করেন "মানুষ' ""- এই লাইনটি পড়ার সাথে সাথে গায়ের রোম দাড়িয়ে যায় , শিরার ভেতরে টগবগ করে রক্তের ছুটে চলা টের পাই ৷
মানুষের জন্যে এত ভালো কবিতা বোধহয় খুব বেশি লেখা হয়নি - , অন্তত আমার তাই
ধারণা ৷
- ভাস্কর চৌধুরি
------------------------
অনেক কথা বলবার আছে আমার
তবে সবার আগে নিরঞ্জনের কথা বলতে হবে আমাকে ৷
নিরঞ্জন আমার বন্ধুর নাম
আর কোন নাম ছিল কি তার ?
আমি জানতাম না ৷
ওর একজন বান্ধবী ছিল
অবশ্য কিছুদিনের জন্য সে তাকে প্রীতম বলে ডাকত ৷
ওর বান্ধবীর নাম ছিলো জয়লতা ৷
নিরঞ্জন জয়লতা সম্পর্কে আমাকে কিছু বলেনি তেমোন ৷
জয়লতাকে কখনো কোন চিঠি লিখেছিলো কিনা
সে কথাও আমাকে সে বলেনি ৷
তবে জয়লতার চিঠি আমি দেখেছি
একটা চিঠি ছিল এরকম -
প্রীতম,
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ৷ তুমি বলেছ , এখন দু:সময় -
কিন্তু আমি জানি , সব সময়ই সুসময় , যদি কেউ ব্যবহার করতে জানে তাকে ৷
আমি বুঝি বেশি দিন নেই ৷
যদি পার এক্ষুনি তুলে নাও
নইলে অন্য পূরুষ ছিবড়ে খাবে আমাকে -
আমার ঘরে বসে সিগারেট টানতে টানতে
নিরঞ্জন চিঠিটা চুপ করে এগিয়ে দিয়ে বলেছিল
"বিভূ, চিঠিটা পড়ুন ৷"
আমি প্রথমে পড়তে চাইনি ৷
পরে ঐটুকু পড়ে তার দিকে তাকিয়েছিলাম --
না - ঐ সিগারেটের ধুয়োয়
আমি কোন নারী প্রেম-তাড়িত মানুষের ছায়া দেখিনি -
ভয়ানক নির্বিকার ৷
কিছু বলছেন না যে ?- আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম
কি বলব ?
এই ব্যাপারে ৷
কোন ব্যাপারে ?
এই যে জয়লতা ৷
বাদ দিন ৷
আমি বাদ দিয়েছিলাম ৷
নিরঞ্জন আমার ঘরে বসে অনেকক্ষণ সিগারেট
টেনে টেনে ঘরটাকে অন্ধকার করে চলে গিয়েছিল সেদিন ৷
জয়লতার সংগে অন্য পূরুষের বিয়ে হয়েছিল ৷
আমি জয়লতা এবং অন্য পূরুষটিকে দেখেছি বহুবার
বিশ্ববিদ্যালয়েই ৷
জয়লতা আরো দেমাগী আরো সুন্দরী হয়ে উঠেছিল৷
অন্য পূরুষ ছিবড়ে খেলে মেয়েরা বুঝি
আরো সুন্দরী হতে থাকে ?
এ কথার সূত্রে নিরঞ্জন আমাকে বলেছিল ,
" মানুষকে এত ক্ষুদ্রার্থে নেবেন না ৷
মানুষ এত বড় যে ,
আপনি যদি 'মানুষ ' শব্দটি একবার উচ্চারণ করেন
যদি অন্তর থেকে করেন উচ্চারণ
যদি বোঝেন এবং উচ্চারণ করেন ' মানুষ' -
তো আপনি কাঁদবেন ৷
আমি মানুষের পক্ষে , মানুষের সন্গে এবং মানুষের জন্যে ৷
হ্যাঁ , মানুষের মুক্তির জন্য নিরঞ্জন মিছিল করতো
আমি শুনেছি নিরঞ্জন বলছে
তুমি দুষ্কৃতি মারো , বান্গালী মারো ,
হিন্দু-মুসলমান মারো , গেরিলা - তামিল মারো ,
এভাবে যেখানে যাকেই মারো না কেন
ইতিহাস লিখবে যে এত মানুষ মরেছে ৷
বড়ই করুণ এবং বড়ই দু:খজনক
শক্তির স্বপক্ষে তুমি যারই মৃত্যু উল্লেখ করে
উল্লাস কর না কেন
মনে রেখো মানুষই মরেছে ৷
এই ভয়ংকর সত্য কথা নিরঞ্জন বলেছিল
মিছিলে হাত উঠিয়ে বলেছিল ,
এভাবে মানুষ মারা চলবে না ৷
মানুষকে বাঁচতে দাও ৷
তার উদ্যত হাতে লেগেছিল
মানুষের হাতে বানানো বন্দুকের গুলি ৷
বুকেও লেগেছিল-
যেখান থেকে " মানুষ ' শব্দটি
বড় পবিত্রতায় বেরিয়ে আসতো ৷
সে লাশ --
আমার বন্ধু নিরঞ্জনের লাশ -
আমি দেখেছি -
রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন লাশ ,
মানুষ কাঁধে করে
তাকে বয়ে এনেছিল মানুষের কাছে ৷
জয়লতা সে লাশ দেখেছিল কিনা
সে প্রশ্ন উঠছে না ৷
দেখলেও যদি কেঁদে থাকে সে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে ,
তাতে নিরঞ্জনের কোন লাভ হয়নি ৷
মানুষ কেঁদেছিল
আমি জানি , তাতে নিরঞ্জনের লাভ ছিল ৷
নিরঞ্জন প্রমাণ করতে পেরেছিল
গতকাল মিছিলে
আইন অমান্যের অভিযোগে
যে দুষ্কৃতি মারা গিয়েছে
তার নাম নিরঞ্জন --
সে আসলে " মানুষ" ৷
************************
কবিতা পড়তে ভালো লাগে , নির্দ্বিধায় স্বীকার করি , আবৃত্তি শুনতে আরো বেশি ভাল লাগে আমার ৷
এই কবিতাটি , আমার ভীষন সৌভাগ্য যে , প্রথম শুনেছিলাম আমাদের দেশের একজন দারুন আবৃত্তিকার - মাহিদুল ইসলামের গলায় ৷
এক অলস বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি.এস.সি-র সামনে বসে বসে মাইকে তার উদাত্ত গলায় আবৃত্তি শুনে কখন যে জ্বলজ্বলে চোখে বসা থেকে উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছি , নিজেই বুঝতে পারিনি ৷
এখনো , প্রতিবার যখন কবিতাটি পড়ি , " যদি বোঝেন এবং উচ্চারন করেন "মানুষ' ""- এই লাইনটি পড়ার সাথে সাথে গায়ের রোম দাড়িয়ে যায় , শিরার ভেতরে টগবগ করে রক্তের ছুটে চলা টের পাই ৷
মানুষের জন্যে এত ভালো কবিতা বোধহয় খুব বেশি লেখা হয়নি - , অন্তত আমার তাই
ধারণা ৷
Subscribe to:
Posts (Atom)