Sunday, April 30, 2006

রচনা রবীন্দ্রনাথ

একটি আবৃত্তির লিংক তুললাম নীচে।
আমার খুব প্রিয় একটি আবৃত্তি। শিমুল মুস্তাফার কন্ঠে, রচনা রবীন্দ্রনাথ। সুনেত্রা ঘটক -এর লেখা। এটা মনে হয় ঠিক কবিতা নয়, কবিতার মত নরম, কিন্তু কবিতা নয়।

-:রচনা রবীন্দ্রনাথ :-

রবীন্দ্রনাথ-কে নিয়ে লেখা এর চেয়ে সুন্দর কিছু আমি এখন পর্যন্ত পড়িনি। অথবা বলা যায়- শুনিনি।
ইচ্ছে ছিল- পুরোটা লিখে তুলে দিব, কিন্তু পরে মনে হলো- তাহলে শিমুলের আবৃত্তি শোনানো হবে না!
তাই তুলে দিলাম পুরোটাই।

কবিতা - ৯

কিসের এমন প্রেরণা পেয়েছে মন
নষ্ট আঁধারে শ্রেষ্ঠ বাসনা খোঁজে।
বুকের অসুখে সুখের সপ্ন লিখে
ঘন দুর্যোগ
তবু সে ভাসায় বেহুলার সাম্পান...


রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতা "বেহুলার সাম্পান"-এর অংশ।

Thursday, April 27, 2006

২৫ শে বৈশাখ নিয়ে কবিতা

একটা ভীষন সুন্দর কবিতা পড়লাম আজ। বাংলালাইভের মজলিশে। কবিতার নাম ছিল না, কবির নাম নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এই কবিতাটির কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি "R " - নামের কোন একজনের প্রতি।
কবিতাটি তুলে দিলাম নীচে।
----------------------------------------

একটি গাছে রোজ সকালে ঠিক দুখানি ফুল,
একটি গাছে রোজ সকালে হিসেবটা নির্ভুল।

ঠিক দুখানি ফুল, ফুটবেনা এর বেশি,
একটি নেবে সুদর্শনা , অন্যটা উর্বশী।

ঠিক দুখানি ফুল, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবনে আশ্বিনে ,
কার্তিকে আর ফাল্গুনে বা ভাদ্র মাসের দিনে।

কিন্তু ধরো, হঠাৎ যদি পঁচিশে বৈশাখে,
সেই সে গাছে ফুল দুটি নয় তিনটে ফুটে থাকে;
সুদর্শনা - উর্বশী তার ভাগ করেছে ঠিক-
একটি -দুটি-তিনটি ফুলই রবীন্দ্রনাথ নিক।

Monday, April 24, 2006

কবিতা ৮ - আগ্নেয়াস্ত্র

আগ্নেয়াস্ত্র

নির্মলেন্দু গুণ
-------------
পুলিশ স্টেশনে ভিড়, আগ্নেয়াস্ত্র জমা নিচ্ছে শহরের
সন্দিগ্ধ সৈনিক৷ সামরিক নির্দেশে ভীত মানুষের
শটগান, রাইফেল, পিস্তল এবং কার্তুজ, যেন দরগার
স্বীকৃত মানত্; টেবিলে ফুলের মত মস্তানের হাত৷

আমি শুধু সামরিক আদেশ অমান্য করে হয়ে গেছি
কোমল বিদ্রোহী, প্রকাশ্যে ফিরছি ঘরে,
অথচ আমার সঙ্গে হৃদয়ের মতো মারাত্মক
একটি আগ্নেয়াস্ত্র, আমি জমা দিই নি৷

(প্রেমাংশুর রক্ত চাই, ১৯৭০)

Saturday, April 22, 2006

কবিতা ৭- যাত্রা- ভঙ্গ

যাত্রা- ভঙ্গ

নির্মলেন্দু গুণ
-----------

হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে,
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই৷

হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন করে যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি৷

তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই৷

তখন আমি একটু ছোঁব,
হাত বাড়িয়ে জাড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরনী নায়ে৷

নায়ের মাঝে বসব বটে,
না-এর মাঝে শোব৷
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ,
দু:খ দিয়ে ছোঁব৷

তুই কেমন করে যাবি?

(আনন্দ কুসুম , ১৯৭৬ )

Thursday, April 20, 2006

কবিতা ৬ - মানুষ

মানুষ

নির্মলেন্দু গুণ
--------------------

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়;
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়৷

আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি৷
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না৷
কী করে তাও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি, সকালবেলা,
দুপুরবেলা অবাক করে সারাটা দিন বেঁচেই আছি
আমার মতো৷ অবাক লাগে৷

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো,
বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো,
রাত্রি বেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো,
পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো৷

আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে আকাষ দেখে হাসবো কেন?
মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে, নাক থাকবে,
তোমার মতো চোখ থাকবে,
নিকেল মাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে৷
ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে৷

মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো,
চোখের মধ্যে অভিমানের রাগ থাকতো,
বাবা থাকতো, বোন থাকতো,
ভালোবাসার লোক থাকতো,
হঠাত্ করে মরে যাবার ভয় থাকতো৷
আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা
আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত
বেঁচে-থাকাটা আর হতো না৷

মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়;
অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,
অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি৷

(কাব্যগ্রন্থ - প্রেমাংশুর রক্ত চাই, প্রথম প্রকাশ ১৯৭০ )

উপন্যাস-কোয়েলের কাছে

হাজার হাজার বছর ধরে আমরা প্রকৃতির সঙ্গে বিপরীতমুখী ছুটে , তার সঙ্গে লড়াই করে যে পার্থক্য অর্জন করেছি, তার গালভরা নাম দিয়েছি সভ্যতা।ঐসব নির্জন নিরালা মুহুর্তে আমার মনে হোত, এই সভ্যতার সত্যিকারের আবরণটি এখনও যথেষ্ট পুরু হয়নি এই এত বছরেও। প্রকৃতির মধ্যে এলেই ঠুনকো আবরণটি খসে যেতে চায়।তখন বোধহয় ভিতরের নগ্ন প্রাকৃত ও সত্যি - আমি বেরিয়ে পড়ে- যে সত্য রূপকে আমরা ভয় পাই।

-----------------------------------
বুদ্ধদেব গুহ'র "কোয়েলের কাছে" ভীষন প্রিয় উপন্যাস আমার। সেখান থেকেই এই অংশ টুকু তুলেছি ।বুদ্ধদেবের লিখার মজাই হচ্ছে প্রকৃতির বর্ণনা। যারা ঘটনার চাইতেও এই দারুণ বর্ণনা উপভোগ করেন বেশি, তারাই বোধ করি বেশি ভালোবাসেন বুদ্ধদেবের লিখা। আমার নিজের ভীষণ ভালো লাগে যখন তার উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে তিনি প্রকৃতির সামনে এনে সত্যিকারের "আমি"এর মুখোমুখি করিয়ে দেন।প ড়তে পড়তে আমিও মাঝে মাঝে ভাবি,সত্যি এরকম নিবিড় করে প্রকৃতির সংস্পর্শে তো কখনও যাই নি। ভীষন ইচ্ছা করে নিজেকে ওখানটায় দাঁড় করাতে...দেখতে আমার ভেতর থেকে আসলে কোন আমি বেরিয়ে আসে !

Wednesday, April 19, 2006

কবিতা ৫- সুন্দর

সুন্দর

নির্মলেন্দু গুণ
-------

সুন্দর এসে থেমে গেছে তার
নাসিকার শেষ প্রান্তে ।

নাকপাশা যেন সোনা দিয়ে মোড়া ,
ঘুঘু চোখ ঘুমে বুদ ।
অথবা শীতের পিপড়ের মুখে
আলতা মাখান খুদ ।

আমার জীবন যাবে আজীবন
তোমার জীবন জানতে।

Tuesday, April 18, 2006

কবিতা ৪-পরানের গহীন ভিতর

পরানের গহীন ভিতর

সৈয়দ শামসুল হক
-------------
জামার ভিতর থিকা যাদুমন্ত্রে বারায় ডাহুক,

চুলের ভিতর থিকা আকবর বাদশার মোহর,
মানুষ বেকুব চুপ,হাটবারে সকলে দেখুক
কেমন মোচর আদিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর ৷
চক্ষের ভিতর থিকা সোহাগের পাখিরে উড়াও,
বুকের ভিতর থিকা পিরীতের পূর্ণিমার চান,
নিজেই তাজ্জব তুমি - একদিকে যাইবার চাও
অথচ আরেক দিকে খুব জোরে দেয় কেউ টান৷
সে তোমার পাওনার এতটুকু পরোয়া করে না,
খেলা যে দেখায় তার দ্যাখানের ইচ্ছায় দেখায়,
ডাহুক উড়ায়া দিয়া তারপর আবার ধরে না,
সোনার মোহর তার পড়া থাকে পথের ধূলায় ৷
এ বড় দারুন বাজি,তারে কই বড় বাজিকর
যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর ৷

Monday, April 17, 2006

অনু কবিতা

আছি ,
বড্ড জানান দিতে ইচ্ছে করে, আছি।
মনে ও মননে গুনগুন করে প্রণয়ের মৌমাছি ।


--------------------------

হেলাল হাফিজের কবিতা ৷ শিরোনাম ভুলে গেছি ৷ কবে কোথায় পড়েছিলাম তাও মনে পড়ে না ৷ শুধু কখনও প্রিয়জনকে কোন কারনে

" আছি " বললেই যেন-- মনের মাঝে গুনগুন করে প্রণয়ের মৌমাছি --!

কবির নাম এবং কবিতাও ভুল লিখেছিলাম, ঠিক করে দিলাম।

কবিতা ৩ - উট্পাখি

উট্পাখি
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত

আমার কথা কি শুনতে পাও না তুমি?
কেন মুখ গুঁজে আছো তবে মিছে ছলে?
কোথায় লুকোবে?ধু-ধু করে মরুভূমি ;
ক্ষ 'য়ে ক্ষ'য়ে ছায়া ম'রে গেছে পদতলে ৷
আজ দিগন্তে মরীচিকাও যে নেই ;
নির্বাক,নীল,নির্মম মহাকাশ!
নিষাদের মন মায়ামৃগে ম'জে নেই
তুমি বিনা তার সমূহ সর্বনাশ ৷
কোথায় পালাবে? ছুটবে বা আর কত?
উদাসীন বালি ঢাকবে না পদরেখা ৷
প্রাকপুরাণিক বাল্যবন্ধু যত
বিগত সবাই ,তুমি অসহায় একা ৷৷

(*******************)

(শেষের অংশ)
আমি জানি এই ধ্বংসের দায়ভাগে
আমরা দুজনে সমান অংশীদার ;
অপরে পাওনা আদায় করেছে আগে,
আমাদের 'পরে দেনা শোধাবার ভার ৷
তাই অসহ্য লাগে ও-আত্মরতি ৷
অন্ধ হ'লে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
আমাকে এড়িয়ে বাড়াও নিজেরই ক্ষতি ৷
ভ্রান্তিবিলাস সাজে না দুর্বিপাকে ৷
অতএব এসো আমরা সন্ধি ক'রে
প্রত্যুপকারে বিরোধী স্বার্থ সাধি :
তুমি নিয়ে চল আমাকে লোকান্তরে,
তোমাকে বন্ধু আমি লোকায়তে বাঁধি ৷৷

Sunday, April 16, 2006

কবিতা ২- রজনীগন্ধা

রজনীগন্ধা

জীবনানন্দ দাশ

----------------

এখন রজনীগন্ধা -- প্রথম -- নতুন--
একটি নক্ষত্র শুধু বিকেলের সমস্ত আকাশে;
অন্ধকার ভালো বলে শান্ত পৃথিবীর
আলো নিভে আসে৷

অনেক কাজের পরে এইখানে থেমে থাকা ভালো;
রজনীগন্ধার ফুলে, মৌমাছির কাছে ৷
কেউ নেই, কিছু নেই,তবু মুখোমুখি
এক আশাতীত ফুল আছে ৷

*************************
সবচে' ভালো - বলে কিছু আছে আমি বিশ্বাস করি না৷
তবু কেউ যদি কখনো জিজ্ঞেস করে, কোন কবিতা আমার সবচে' ভালো লাগে- আমি এই কবিতার কথাই বলবো৷

Wednesday, April 12, 2006

কবিতা ১ - আমার বন্ধু নিরঞ্জন ৷

আমার বন্ধু নিরঞ্জন ৷

- ভাস্কর চৌধুরি
------------------------

অনেক কথা বলবার আছে আমার
তবে সবার আগে নিরঞ্জনের কথা বলতে হবে আমাকে ৷
নিরঞ্জন আমার বন্ধুর নাম
আর কোন নাম ছিল কি তার ?
আমি জানতাম না ৷
ওর একজন বান্ধবী ছিল
অবশ্য কিছুদিনের জন্য সে তাকে প্রীতম বলে ডাকত ৷

ওর বান্ধবীর নাম ছিলো জয়লতা ৷
নিরঞ্জন জয়লতা সম্পর্কে আমাকে কিছু বলেনি তেমোন ৷
জয়লতাকে কখনো কোন চিঠি লিখেছিলো কিনা
সে কথাও আমাকে সে বলেনি ৷
তবে জয়লতার চিঠি আমি দেখেছি
একটা চিঠি ছিল এরকম -
প্রীতম,
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ৷ তুমি বলেছ , এখন দু:সময় -
কিন্তু আমি জানি , সব সময়ই সুসময় , যদি কেউ ব্যবহার করতে জানে তাকে ৷
আমি বুঝি বেশি দিন নেই ৷
যদি পার এক্ষুনি তুলে নাও
নইলে অন্য পূরুষ ছিবড়ে খাবে আমাকে -

আমার ঘরে বসে সিগারেট টানতে টানতে
নিরঞ্জন চিঠিটা চুপ করে এগিয়ে দিয়ে বলেছিল
"বিভূ, চিঠিটা পড়ুন ৷"
আমি প্রথমে পড়তে চাইনি ৷
পরে ঐটুকু পড়ে তার দিকে তাকিয়েছিলাম --
না - ঐ সিগারেটের ধুয়োয়
আমি কোন নারী প্রেম-তাড়িত মানুষের ছায়া দেখিনি -
ভয়ানক নির্বিকার ৷
কিছু বলছেন না যে ?- আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম
কি বলব ?
এই ব্যাপারে ৷
কোন ব্যাপারে ?
এই যে জয়লতা ৷
বাদ দিন ৷


আমি বাদ দিয়েছিলাম ৷
নিরঞ্জন আমার ঘরে বসে অনেকক্ষণ সিগারেট
টেনে টেনে ঘরটাকে অন্ধকার করে চলে গিয়েছিল সেদিন ৷

জয়লতার সংগে অন্য পূরুষের বিয়ে হয়েছিল ৷
আমি জয়লতা এবং অন্য পূরুষটিকে দেখেছি বহুবার
বিশ্ববিদ্যালয়েই ৷
জয়লতা আরো দেমাগী আরো সুন্দরী হয়ে উঠেছিল৷
অন্য পূরুষ ছিবড়ে খেলে মেয়েরা বুঝি
আরো সুন্দরী হতে থাকে ?

এ কথার সূত্রে নিরঞ্জন আমাকে বলেছিল ,
" মানুষকে এত ক্ষুদ্রার্থে নেবেন না ৷
মানুষ এত বড় যে ,
আপনি যদি 'মানুষ ' শব্দটি একবার উচ্চারণ করেন
যদি অন্তর থেকে করেন উচ্চারণ
যদি বোঝেন এবং উচ্চারণ করেন ' মানুষ' -
তো আপনি কাঁদবেন ৷
আমি মানুষের পক্ষে , মানুষের সন্গে এবং মানুষের জন্যে ৷


হ্যাঁ , মানুষের মুক্তির জন্য নিরঞ্জন মিছিল করতো
আমি শুনেছি নিরঞ্জন বলছে
তুমি দুষ্কৃতি মারো , বান্গালী মারো ,
হিন্দু-মুসলমান মারো , গেরিলা - তামিল মারো ,
এভাবে যেখানে যাকেই মারো না কেন
ইতিহাস লিখবে যে এত মানুষ মরেছে ৷
বড়ই করুণ এবং বড়ই দু:খজনক
শক্তির স্বপক্ষে তুমি যারই মৃত্যু উল্লেখ করে
উল্লাস কর না কেন
মনে রেখো মানুষই মরেছে ৷
এই ভয়ংকর সত্য কথা নিরঞ্জন বলেছিল
মিছিলে হাত উঠিয়ে বলেছিল ,
এভাবে মানুষ মারা চলবে না ৷
মানুষকে বাঁচতে দাও ৷

তার উদ্যত হাতে লেগেছিল
মানুষের হাতে বানানো বন্দুকের গুলি ৷
বুকেও লেগেছিল-
যেখান থেকে " মানুষ ' শব্দটি
বড় পবিত্রতায় বেরিয়ে আসতো ৷
সে লাশ --
আমার বন্ধু নিরঞ্জনের লাশ -
আমি দেখেছি -
রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন লাশ ,
মানুষ কাঁধে করে
তাকে বয়ে এনেছিল মানুষের কাছে ৷

জয়লতা সে লাশ দেখেছিল কিনা
সে প্রশ্ন উঠছে না ৷
দেখলেও যদি কেঁদে থাকে সে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে ,
তাতে নিরঞ্জনের কোন লাভ হয়নি ৷
মানুষ কেঁদেছিল
আমি জানি , তাতে নিরঞ্জনের লাভ ছিল ৷
নিরঞ্জন প্রমাণ করতে পেরেছিল
গতকাল মিছিলে
আইন অমান্যের অভিযোগে
যে দুষ্কৃতি মারা গিয়েছে
তার নাম নিরঞ্জন --

সে আসলে " মানুষ" ৷

************************

কবিতা পড়তে ভালো লাগে , নির্দ্বিধায় স্বীকার করি , আবৃত্তি শুনতে আরো বেশি ভাল লাগে আমার ৷
এই কবিতাটি , আমার ভীষন সৌভাগ্য যে , প্রথম শুনেছিলাম আমাদের দেশের একজন দারুন আবৃত্তিকার - মাহিদুল ইসলামের গলায় ৷
এক অলস বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি.এস.সি-র সামনে বসে বসে মাইকে তার উদাত্ত গলায় আবৃত্তি শুনে কখন যে জ্বলজ্বলে চোখে বসা থেকে উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছি , নিজেই বুঝতে পারিনি ৷
এখনো , প্রতিবার যখন কবিতাটি পড়ি , " যদি বোঝেন এবং উচ্চারন করেন "মানুষ' ""- এই লাইনটি পড়ার সাথে সাথে গায়ের রোম দাড়িয়ে যায় , শিরার ভেতরে টগবগ করে রক্তের ছুটে চলা টের পাই ৷
মানুষের জন্যে এত ভালো কবিতা বোধহয় খুব বেশি লেখা হয়নি - , অন্তত আমার তাই
ধারণা ৷