আমার এ ঘর ভাঙ্গিলো যে বা,
আমি বাঁধি তাঁর ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই -
যে মোরে করেছে পর।
----------------------
জসীম উদ্দীন এর কবিতা। পুরোটা মনে নেই।
Tuesday, May 23, 2006
Monday, May 08, 2006
উপেক্ষা
উপেক্ষা
নির্মলেন্দু গুণ
-------
অনন্ত বিরহ চাই, ভালোবেসে কার্পণ্য শিখিনি৷
তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে ভুলে যেতে পারি
সমস্ত বোধের উত্স গ্রাস করা প্রেম; যদি চাও
ভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও৷
আমি কি ডরাই সখি, ভালোবাসা ভিখারি বিরহে?
( দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী; ১৯৭৪)
নির্মলেন্দু গুণ
-------
অনন্ত বিরহ চাই, ভালোবেসে কার্পণ্য শিখিনি৷
তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে ভুলে যেতে পারি
সমস্ত বোধের উত্স গ্রাস করা প্রেম; যদি চাও
ভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও৷
আমি কি ডরাই সখি, ভালোবাসা ভিখারি বিরহে?
( দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী; ১৯৭৪)
নাস্তিক
নাস্তিক
নির্মলেন্দু গুণ
-------
নেই স্বর্গলোভ কিংবা কল্প-নরকের ভয়,
অলীক সাফল্যমুক্ত কর্মময় পৃথিবী আমার৷
চর্মচোখে যা যা দেখি, শারীরিক ইন্দ্রিয় যা ধরে,
তাকেই গ্রহন করি৷ জানি, নিরাকার অপ্রত্যক্ষ
শুধুই ছলনা, বিশ্বাস করি না ভাগ্যে, দেবতার বরে৷
আমার জগত্ মুগ্ধ বাস্তবের বস্তুপুঞ্জে ঠাসা,
তাই সে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, অতীন্দ্রিয় নয়৷
অন্ধতার বধ্যভূমি আমার হদৃয়৷
সেই শ্রেষ্ঠ মানব-সন্তান, যার মন মুক্ত ভগবান৷
আমার মস্তক নিত্য নত সেই নাস্তিকের তরে৷
(দূর হ দু:শাসন ; ১৯৮৩ )
নির্মলেন্দু গুণ
-------
নেই স্বর্গলোভ কিংবা কল্প-নরকের ভয়,
অলীক সাফল্যমুক্ত কর্মময় পৃথিবী আমার৷
চর্মচোখে যা যা দেখি, শারীরিক ইন্দ্রিয় যা ধরে,
তাকেই গ্রহন করি৷ জানি, নিরাকার অপ্রত্যক্ষ
শুধুই ছলনা, বিশ্বাস করি না ভাগ্যে, দেবতার বরে৷
আমার জগত্ মুগ্ধ বাস্তবের বস্তুপুঞ্জে ঠাসা,
তাই সে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, অতীন্দ্রিয় নয়৷
অন্ধতার বধ্যভূমি আমার হদৃয়৷
সেই শ্রেষ্ঠ মানব-সন্তান, যার মন মুক্ত ভগবান৷
আমার মস্তক নিত্য নত সেই নাস্তিকের তরে৷
(দূর হ দু:শাসন ; ১৯৮৩ )
এবারই প্রথম তুমি
এবারই প্রথম তুমি
নির্মলেন্দু গুণ
-----------------
ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে
মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না
ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে
ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না৷
ফুলেও ছিলে না, ফলেও ছিলে না
নাকে মুখে চোখে চুলেও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি এখানে ছিলে না
এর আগে তুমি সেখানে ছিলে না
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
রাতের পুণ্য লগনে ছিলে না
নীল নবঘন গগনে ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি তুমিও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
(অচল পদাবলী, ১৯৮২ )
নির্মলেন্দু গুণ
-----------------
ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে
মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না
ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে
ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না৷
ফুলেও ছিলে না, ফলেও ছিলে না
নাকে মুখে চোখে চুলেও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি এখানে ছিলে না
এর আগে তুমি সেখানে ছিলে না
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
রাতের পুণ্য লগনে ছিলে না
নীল নবঘন গগনে ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি তুমিও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
(অচল পদাবলী, ১৯৮২ )
তুলনামূলক হাত
তুলনামূলক হাত
নির্মলেন্দু গুণ
------------------
তুমি যেখানেই স্পর্শ রাখো সেখানেই আমার শরীর৷
তোমার চুলের ধোয়া জল তুমি যেখানেই
খোঁপা ভেঙ্গে বিলাও মাটিকে;
আমি এসে পাতি হাত, জলভারে নতদেহ আর
চোখের সামগ্রী নিয়ে ফিরি ঘরে, অথবা ফিরি না ঘরে,
তোমার চতুর্দিকে শূন্যতাকে ভরে থেকে যাই৷
তুমি যেখানেই হাত রাখো, যেখানেই কান থেকে
খুলে রাখো দুল, কন্ঠ থেকে খুলে রাখো হার,
সেখানেই শরীর আমার হয়ে ওঠে রক্তজবা ফুল৷
তুমি যেখানেই ঠোঁট রাখো সেখানেই আমার চুম্বন
তোমার শরীর থেকে প্রবল অযত্নে ঝরে যায়৷
আমি পোকা হয়ে পিচুটির মতো
তোমার ঐ চোখের ছায়ায় প্রতিদিন খেলা করে যাই,
ভালোবেসে নিজেকে কাঁদাই৷
তুমি শাড়ির আঁচল দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিলে
আমি রথ রেখে পথে এসে তোমারই দ্বৈরথে বসে থাকি
তোমার আশায়৷ তুমি যেখানেই হাত রাখো
আমার উদগ্রীব চিত্র থাকে সেখানেই৷ আমি যেখানেই
হাত পাতি সেখানেই অসীম শূন্যতা, তুমি নেই৷
( না প্রেমিক না বিপ্লবী; ১৯৭২ )
নির্মলেন্দু গুণ
------------------
তুমি যেখানেই স্পর্শ রাখো সেখানেই আমার শরীর৷
তোমার চুলের ধোয়া জল তুমি যেখানেই
খোঁপা ভেঙ্গে বিলাও মাটিকে;
আমি এসে পাতি হাত, জলভারে নতদেহ আর
চোখের সামগ্রী নিয়ে ফিরি ঘরে, অথবা ফিরি না ঘরে,
তোমার চতুর্দিকে শূন্যতাকে ভরে থেকে যাই৷
তুমি যেখানেই হাত রাখো, যেখানেই কান থেকে
খুলে রাখো দুল, কন্ঠ থেকে খুলে রাখো হার,
সেখানেই শরীর আমার হয়ে ওঠে রক্তজবা ফুল৷
তুমি যেখানেই ঠোঁট রাখো সেখানেই আমার চুম্বন
তোমার শরীর থেকে প্রবল অযত্নে ঝরে যায়৷
আমি পোকা হয়ে পিচুটির মতো
তোমার ঐ চোখের ছায়ায় প্রতিদিন খেলা করে যাই,
ভালোবেসে নিজেকে কাঁদাই৷
তুমি শাড়ির আঁচল দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিলে
আমি রথ রেখে পথে এসে তোমারই দ্বৈরথে বসে থাকি
তোমার আশায়৷ তুমি যেখানেই হাত রাখো
আমার উদগ্রীব চিত্র থাকে সেখানেই৷ আমি যেখানেই
হাত পাতি সেখানেই অসীম শূন্যতা, তুমি নেই৷
( না প্রেমিক না বিপ্লবী; ১৯৭২ )
ফুলদানি
ফুলদানি
নির্মলেন্দু গুণ
----------
যেকোনো বাগান থেকে যেটা ইচ্ছে সেই ফুল,
যেকোনো সময় আমি তুলে নিয়ে যদি কভু
তোমার খোঁপায়, আহা, অজগর তোমার খোঁপায়
সাজাবার সুজোগ পেতাম--; তাহলে দেখতে লীলা,
তোমার শরীর ছুঁয়ে লাবণ্যের লোভন ফুলেরা
উদ্বেল হদৃয়ে নিত্য বিপর্যস্ত হতো, মত্ত মমতায়
বলতো আশ্চর্য হয়ে, হতো বলতেই;
" খোঁপার মতন কোনো ফুলদানি নেই৷ '
( প্রেমাংশুর রক্ত চাই, ১৯৭০ )
নির্মলেন্দু গুণ
----------
যেকোনো বাগান থেকে যেটা ইচ্ছে সেই ফুল,
যেকোনো সময় আমি তুলে নিয়ে যদি কভু
তোমার খোঁপায়, আহা, অজগর তোমার খোঁপায়
সাজাবার সুজোগ পেতাম--; তাহলে দেখতে লীলা,
তোমার শরীর ছুঁয়ে লাবণ্যের লোভন ফুলেরা
উদ্বেল হদৃয়ে নিত্য বিপর্যস্ত হতো, মত্ত মমতায়
বলতো আশ্চর্য হয়ে, হতো বলতেই;
" খোঁপার মতন কোনো ফুলদানি নেই৷ '
( প্রেমাংশুর রক্ত চাই, ১৯৭০ )
যুদ্ধ
যুদ্ধ
নির্মলেন্দু গুণ
-----
যুদ্ধ মানেই শত্রু শত্রু খেলা,
যুদ্ধ মানেই
আমার প্রতি তোমার অবহেলা৷
(প্রেমাংশুর রক্ত চাই; ১৯৭০)
নির্মলেন্দু গুণ
-----
যুদ্ধ মানেই শত্রু শত্রু খেলা,
যুদ্ধ মানেই
আমার প্রতি তোমার অবহেলা৷
(প্রেমাংশুর রক্ত চাই; ১৯৭০)
হুলিয়া
হুলিয়া
নির্মলেন্দু গুণ
-------------
আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
চতুর্দিকে চিক্চিক করছে রোদ্দুর-;
আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন
একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে৷
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে,
ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে
আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই
আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল, একজন পেছন থেকে
কাঁধে হাত রেখে চিত্কার করে উঠেছিল;- আমি সবাইকে
মানুষের সমিল চেহারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি৷
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, একজন রাজনৈতিক নেতা
তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন, মুখোমুখি বসে দূর থেকে
বারবার চেয়ে দেখলেন-, কিন্তু চিনতে পারলেন না৷
বারহাট্টায় নেমেই রফিজের স্টলে চা খেয়েছি,
অথচ কী আশ্চর্য, পুনর্বার চিনি দিতে এসেও
রফিজ আমাকে চিনলো না৷
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি৷
সেই একই ভাঙাপথ, একই কালোমাটির আল ধরে
গ্রামে ফেরা, আমি কতদিন পর গ্রামে ফিরছি৷
আমি যখন গ্রামে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
আমার চতুর্দিকে চিক্চিক করছে রোদ,
শো-ঁশো ঁকরছে হাওয়া৷
অনেক বদলে গেছে বাড়িটা,
টিনের চাল থেকে শুরু করে পুকুরের জল,
ফুলের বাগান থেকে শুরু করে গরুর গোয়াল;
চিহ্নমাত্র শৈশবের স্মৃতি যেন নেই কোনখানে৷
পড়ার ঘরের বারান্দায় নুয়ে-পড়া বেলিফুলের গাছ থেকে
একটি লাউডুগী উত্তপ্ত দুপুরকে তার লক্লকে জিভ দেখালো৷
স্বত:স্ফূর্ত মুখের দাড়ির মতো বাড়িটির চতুর্দিকে ঘাস, জঙ্গল,
গর্ত, আগাছার গাঢ় বন গড়ে উঠেছে অনায়াসে; যেন সবখানেই
সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে এখানে শাসন করছে গোঁয়ার প্রকৃতি৷
একটি শেয়াল একটি কুকুরের পাশে শুয়েছিল প্রায়,
আমাকে দেখেই পালালো একজন, একজন গন্ধ শুঁকে নিয়ে
আমাকে চিনতে চেষ্টা করলো- যেন পুলিশ-সমেত চেকার
তেজগাঁয় আমাকে চিনতে চেষ্টা করেছিল৷
হাঁটতে- হাঁটতে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়ালাম,
অশোক গাছ, বাষট্টির ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া অশোক,
একসময়ে কী ভীষন ছায়া দিতো এই গাছটা;
অনায়াসে দু'জন মানুষ মিশে থাকতে পারতো এর ছায়ায়৷
আমরা ভালোবাসার নামে একদিন সারারাত
এ-গাছের ছায়ায় লুকিয়ে ছিলুম৷
সেই বাসন্তী, আহা, সেই বাসন্তী এখন বিহারে,
ডাকাত স্বামীর ঘরে চার- সন্তানের জননী হয়েছে৷
পুকুরের জলে শব্দ উঠলো মাছের, আবার জিভ দেখালো সাপ,
শান্ত-স্থির-বোকা গ্রামকে কাঁপিয়ে দিয়ে
একটি এরোপ্লেন তখন উড়ে গেলো পশ্চিমে - -৷
আমি বাড়ির পেছন থেকে দরোজায় টোকা দিয়ে
ডাকলুম,--- "মা'৷
বহুদিন যে-দরোজা খোলেনি,
বহুদিন যে দরোজায় কোন কন্ঠস্বর ছিল না,
মরচে-পরা সেই দরোজা মুহূর্তেই ক্যাচ্ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো৷
বহুদিন চেষ্টা করেও যে গোয়েন্দা-বিভাগ আমাকে ধরতে পারেনি,
চৈত্রের উত্তপ্ত দুপুরে, অফুরন্ত হাওয়ার ভিতরে সেই আমি
কত সহজেই একটি আলিঙ্গনের কাছে বন্দী হয়ে গেলুম;
সেই আমি কত সহজেই মায়ের চোখে চোখ রেখে
একটি অবুঝ সন্তান হয়ে গেলুম৷
মা আমাকে ক্রন্দনসিক্ত একটি চুম্বনের মধ্যে
লুকিয়ে রেখে অনেক জঙ্গলের পথ অতিক্রম করে
পুকুরের জলে চাল ধুতে গেলেন; আমি ঘরের ভিতরে তাকালুম,
দেখলুম দু'ঘরের মাঝামাঝি যেখানে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি ছিল,
সেখানে লেনিন, বাবার জমা- খরচের পাশে কার্ল মার্কস;
আলমিরার একটি ভাঙ্গা- কাচের অভাব পূরণ করছে
ক্রুপস্কায়ার ছেঁড়া ছবি৷
মা পুকুর থেকে ফিরছেন, সন্ধ্যায় মহকুমা শহর থেকে
ফিরবেন বাবা, তাঁর পিঠে সংসারের ব্যাগ ঝুলবে তেমনি৷
সেনবাড়ি থেকে খবর পেয়ে বৌদি আসবেন,
পুনর্বার বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন আমাকে৷
খবর পেয়ে যশমাধব থেকে আসবে ন্যাপকর্মী ইয়াসিন,
তিন মাইল বিষ্টির পথ হেঁটে রসুলপুর থেকে আসবে আদিত্য৷
রাত্রে মারাত্মক অস্ত্র হাতে নিয়ে আমতলা থেকে আসবে আব্বাস৷
ওরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করবে ঢাকার খবর:
-- আমাদের ভবিষ্য়্ত্ কী?
-- আইয়ুব খান এখন কোথায়?
-- শেখ মুজিব কি ভুল করেছেন?
-- আমার নামে কতদিন আর এরকম হুলিয়া ঝুলবে?
আমি কিছুই বলবো না৷
আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকা সারি সারি চোখের ভিতরে
বাংলার বিভিন্ন ভবিষ্য়্ত্কে চেয়ে চেয়ে দেখবো৷
উত্কন্ঠিত চোখে চোখে নামবে কালো অন্ধকার, আমি চিত্কার করে
কন্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার জ্বালা মুছে নিয়ে বলবো:
" আমি এসবের কিছুই জানি না,
আমি এসবের কিছুই বুঝি না৷'
(প্রেমাংশুর রক্ত চাই, ১৯৭০ )
নির্মলেন্দু গুণ
-------------
আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
চতুর্দিকে চিক্চিক করছে রোদ্দুর-;
আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন
একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে৷
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে,
ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে
আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই
আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল, একজন পেছন থেকে
কাঁধে হাত রেখে চিত্কার করে উঠেছিল;- আমি সবাইকে
মানুষের সমিল চেহারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি৷
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, একজন রাজনৈতিক নেতা
তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন, মুখোমুখি বসে দূর থেকে
বারবার চেয়ে দেখলেন-, কিন্তু চিনতে পারলেন না৷
বারহাট্টায় নেমেই রফিজের স্টলে চা খেয়েছি,
অথচ কী আশ্চর্য, পুনর্বার চিনি দিতে এসেও
রফিজ আমাকে চিনলো না৷
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি৷
সেই একই ভাঙাপথ, একই কালোমাটির আল ধরে
গ্রামে ফেরা, আমি কতদিন পর গ্রামে ফিরছি৷
আমি যখন গ্রামে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
আমার চতুর্দিকে চিক্চিক করছে রোদ,
শো-ঁশো ঁকরছে হাওয়া৷
অনেক বদলে গেছে বাড়িটা,
টিনের চাল থেকে শুরু করে পুকুরের জল,
ফুলের বাগান থেকে শুরু করে গরুর গোয়াল;
চিহ্নমাত্র শৈশবের স্মৃতি যেন নেই কোনখানে৷
পড়ার ঘরের বারান্দায় নুয়ে-পড়া বেলিফুলের গাছ থেকে
একটি লাউডুগী উত্তপ্ত দুপুরকে তার লক্লকে জিভ দেখালো৷
স্বত:স্ফূর্ত মুখের দাড়ির মতো বাড়িটির চতুর্দিকে ঘাস, জঙ্গল,
গর্ত, আগাছার গাঢ় বন গড়ে উঠেছে অনায়াসে; যেন সবখানেই
সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে এখানে শাসন করছে গোঁয়ার প্রকৃতি৷
একটি শেয়াল একটি কুকুরের পাশে শুয়েছিল প্রায়,
আমাকে দেখেই পালালো একজন, একজন গন্ধ শুঁকে নিয়ে
আমাকে চিনতে চেষ্টা করলো- যেন পুলিশ-সমেত চেকার
তেজগাঁয় আমাকে চিনতে চেষ্টা করেছিল৷
হাঁটতে- হাঁটতে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়ালাম,
অশোক গাছ, বাষট্টির ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া অশোক,
একসময়ে কী ভীষন ছায়া দিতো এই গাছটা;
অনায়াসে দু'জন মানুষ মিশে থাকতে পারতো এর ছায়ায়৷
আমরা ভালোবাসার নামে একদিন সারারাত
এ-গাছের ছায়ায় লুকিয়ে ছিলুম৷
সেই বাসন্তী, আহা, সেই বাসন্তী এখন বিহারে,
ডাকাত স্বামীর ঘরে চার- সন্তানের জননী হয়েছে৷
পুকুরের জলে শব্দ উঠলো মাছের, আবার জিভ দেখালো সাপ,
শান্ত-স্থির-বোকা গ্রামকে কাঁপিয়ে দিয়ে
একটি এরোপ্লেন তখন উড়ে গেলো পশ্চিমে - -৷
আমি বাড়ির পেছন থেকে দরোজায় টোকা দিয়ে
ডাকলুম,--- "মা'৷
বহুদিন যে-দরোজা খোলেনি,
বহুদিন যে দরোজায় কোন কন্ঠস্বর ছিল না,
মরচে-পরা সেই দরোজা মুহূর্তেই ক্যাচ্ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো৷
বহুদিন চেষ্টা করেও যে গোয়েন্দা-বিভাগ আমাকে ধরতে পারেনি,
চৈত্রের উত্তপ্ত দুপুরে, অফুরন্ত হাওয়ার ভিতরে সেই আমি
কত সহজেই একটি আলিঙ্গনের কাছে বন্দী হয়ে গেলুম;
সেই আমি কত সহজেই মায়ের চোখে চোখ রেখে
একটি অবুঝ সন্তান হয়ে গেলুম৷
মা আমাকে ক্রন্দনসিক্ত একটি চুম্বনের মধ্যে
লুকিয়ে রেখে অনেক জঙ্গলের পথ অতিক্রম করে
পুকুরের জলে চাল ধুতে গেলেন; আমি ঘরের ভিতরে তাকালুম,
দেখলুম দু'ঘরের মাঝামাঝি যেখানে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি ছিল,
সেখানে লেনিন, বাবার জমা- খরচের পাশে কার্ল মার্কস;
আলমিরার একটি ভাঙ্গা- কাচের অভাব পূরণ করছে
ক্রুপস্কায়ার ছেঁড়া ছবি৷
মা পুকুর থেকে ফিরছেন, সন্ধ্যায় মহকুমা শহর থেকে
ফিরবেন বাবা, তাঁর পিঠে সংসারের ব্যাগ ঝুলবে তেমনি৷
সেনবাড়ি থেকে খবর পেয়ে বৌদি আসবেন,
পুনর্বার বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন আমাকে৷
খবর পেয়ে যশমাধব থেকে আসবে ন্যাপকর্মী ইয়াসিন,
তিন মাইল বিষ্টির পথ হেঁটে রসুলপুর থেকে আসবে আদিত্য৷
রাত্রে মারাত্মক অস্ত্র হাতে নিয়ে আমতলা থেকে আসবে আব্বাস৷
ওরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করবে ঢাকার খবর:
-- আমাদের ভবিষ্য়্ত্ কী?
-- আইয়ুব খান এখন কোথায়?
-- শেখ মুজিব কি ভুল করেছেন?
-- আমার নামে কতদিন আর এরকম হুলিয়া ঝুলবে?
আমি কিছুই বলবো না৷
আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকা সারি সারি চোখের ভিতরে
বাংলার বিভিন্ন ভবিষ্য়্ত্কে চেয়ে চেয়ে দেখবো৷
উত্কন্ঠিত চোখে চোখে নামবে কালো অন্ধকার, আমি চিত্কার করে
কন্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার জ্বালা মুছে নিয়ে বলবো:
" আমি এসবের কিছুই জানি না,
আমি এসবের কিছুই বুঝি না৷'
(প্রেমাংশুর রক্ত চাই, ১৯৭০ )
আমার জন্ম
আমার জন্ম
নির্মলেন্দু গুণ
-----------
তপ শেষে যখন বাল্মীকি তাঁর মুদিত নয়ন
খুলিলেন, দেখিলেন লব নেই; চোখের সমুখে
দিগন্তবিস্তৃত ধু-ধু শূন্য তপোবন প'ড়ে আছে৷
"কোথা লব, কোথা লব? ফিরে আয়৷' ডাকিলেন মুনি,
ফিরে এলো প্রতিধ্বনি, শিশু লব দিলো না উত্তর৷
এ কোন্ বিধির লীলা, ভাবিলেন চিন্তক্লীষ্ট মুনি:
" শুন্য হাতে কী মুখে যাইব আজ সেই পূণ্যাশ্রমে,
-- যেখানে অকল্পনীয় লব-হীন সীতার জীবন৷
যোগসিদ্ধ ঋষি তিনি, দৈববিদ্যা করায়ত্ত তাঁর,
যদি সেই তপলব্ধ দৈবজ্ঞান করিলে প্রয়োগ
মাতৃকোল পূর্ণ হয়, তৃপ্ত করে সীতার হদৃয়--
তবে তাই হোক--, মহামন্ত্রে জন্ম নিল দেবশিশু৷
পেলো প্রাণ-চঞ্চলতা অবিকল লবের মতোন৷
যেহেতু নির্মিত কুশে, তার নাম রাখা হলো কুশ৷
না আমি নির্মিত নই বাল্মীকির কাল্পনিক কুশে,
আমাকে দিয়েছে জন্ম রক্তঝরা অমর একুশে৷
(পৃথিবীজোড়া গান, ১৯৮২)
নির্মলেন্দু গুণ
-----------
তপ শেষে যখন বাল্মীকি তাঁর মুদিত নয়ন
খুলিলেন, দেখিলেন লব নেই; চোখের সমুখে
দিগন্তবিস্তৃত ধু-ধু শূন্য তপোবন প'ড়ে আছে৷
"কোথা লব, কোথা লব? ফিরে আয়৷' ডাকিলেন মুনি,
ফিরে এলো প্রতিধ্বনি, শিশু লব দিলো না উত্তর৷
এ কোন্ বিধির লীলা, ভাবিলেন চিন্তক্লীষ্ট মুনি:
" শুন্য হাতে কী মুখে যাইব আজ সেই পূণ্যাশ্রমে,
-- যেখানে অকল্পনীয় লব-হীন সীতার জীবন৷
যোগসিদ্ধ ঋষি তিনি, দৈববিদ্যা করায়ত্ত তাঁর,
যদি সেই তপলব্ধ দৈবজ্ঞান করিলে প্রয়োগ
মাতৃকোল পূর্ণ হয়, তৃপ্ত করে সীতার হদৃয়--
তবে তাই হোক--, মহামন্ত্রে জন্ম নিল দেবশিশু৷
পেলো প্রাণ-চঞ্চলতা অবিকল লবের মতোন৷
যেহেতু নির্মিত কুশে, তার নাম রাখা হলো কুশ৷
না আমি নির্মিত নই বাল্মীকির কাল্পনিক কুশে,
আমাকে দিয়েছে জন্ম রক্তঝরা অমর একুশে৷
(পৃথিবীজোড়া গান, ১৯৮২)
স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
নির্মলেন্দু গুণ
----------------------------------------
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: " কখন আসবে কবি?'
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি?
জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ ... ৷
হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প৷
সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর৷
না পার্ক না ফুলের বাগান, -- এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়৷
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে৷
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক৷
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে
আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে৷
একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: "কখন আসবে কবি?' "কখন আসবে কবি?'
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷"
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের৷
( চাষাভুষার কাব্য, ১৯৮১ )
নির্মলেন্দু গুণ
----------------------------------------
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: " কখন আসবে কবি?'
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি?
জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ ... ৷
হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প৷
সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর৷
না পার্ক না ফুলের বাগান, -- এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়৷
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে৷
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক৷
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে
আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে৷
একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: "কখন আসবে কবি?' "কখন আসবে কবি?'
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷"
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের৷
( চাষাভুষার কাব্য, ১৯৮১ )
Monday, May 01, 2006
কবিতা - ১২
আমি তোমাকে এত বেশি সপ্ন দেখেছি যে তুমি
তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছো
এখনো কি সময় আছে তোমার জীবন্ত শরীর স্পর্শ করার
এবং যে ওষ্ঠ থেকে আমার অতি প্রিয় সর জন্ম নেয়
সেখানে চুম্বন দেবার?......
আমি তোমাকে এত বেশি সপ্ন দেখেছি যে হয়তো
আমার পক্ষে আর জাগাই সম্ভব হবে না
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাই,আমার শরীর সব
রকম জীবন ও ভালোবাসার জন্য উন্মুক্ত.......
আমি তোমার ভুরু ছুঁতে পারি,ওষ্ঠ ছুঁতে পারি এত কম......
আমি তোমাকে এত বেশি সপ্ন দেখেছি,হেঁটেছি,
কথা বলেছি।
শুয়েছি তোমার ছায়ার সঙ্গে...............
************************************
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "ছবির দেশে,কবিতার দেশে" বইতে পেয়েছিলাম এই কবিতাটা। রোবেয়ার দেনো-এর লিখা আর সুনীলের চমৎকার অনুবাদ।আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতার অন্যতম কবিতা হচ্ছে এটা...।
তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছো
এখনো কি সময় আছে তোমার জীবন্ত শরীর স্পর্শ করার
এবং যে ওষ্ঠ থেকে আমার অতি প্রিয় সর জন্ম নেয়
সেখানে চুম্বন দেবার?......
আমি তোমাকে এত বেশি সপ্ন দেখেছি যে হয়তো
আমার পক্ষে আর জাগাই সম্ভব হবে না
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাই,আমার শরীর সব
রকম জীবন ও ভালোবাসার জন্য উন্মুক্ত.......
আমি তোমার ভুরু ছুঁতে পারি,ওষ্ঠ ছুঁতে পারি এত কম......
আমি তোমাকে এত বেশি সপ্ন দেখেছি,হেঁটেছি,
কথা বলেছি।
শুয়েছি তোমার ছায়ার সঙ্গে...............
************************************
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "ছবির দেশে,কবিতার দেশে" বইতে পেয়েছিলাম এই কবিতাটা। রোবেয়ার দেনো-এর লিখা আর সুনীলের চমৎকার অনুবাদ।আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতার অন্যতম কবিতা হচ্ছে এটা...।
কবিতা - ১১
মন ভালো নেই
মহাদেব সাহা
-------------
বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই,
মন ভালো নেই;
ফাঁকা রাস্তা, শূন্য বারান্দা
সারাদিন ডাকি সাড়া নেই,
একবার ফিরেও চায় না কেউ
পথ ভুল করে চলে যায়,এদিকে আসে না
আমি কি সহস্র বর্ষ এভাবে
তাকিয়ে থাকব শূণ্যতার দিকে?
এই শুন্য ঘরে, এই নির্বাসনে
কতোকাল,আর কতোকাল !
আজ দুঃখ ছুঁয়েছে ঘরবাড়ি,
উদ্যানে উঠেছে ক্যাকটাস -
কেউ নেই, কড়া নাড়ার মতো কেউ নেই,
শুধু শূণ্যতার এই দীর্ঘশাস, এই দীর্ঘ পদধনি।
টেলিফোন ঘোরাতে ঘোরাতে আমি ক্লান্ত
ডাকতে ডাকতে একশেষ;
কেউ ডাক শোনে না, কেউ ফিরে তাকায় না
এই হিমঘরে ভাঙ্গা চেয়ারে একা বসে আছি।
এ কী শাস্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো ঈশর,
এভাবে দগ্ধ হওয়ার নাম কি বেঁচে থাকা !
তবু মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, আমি বেঁচে থাকতে চাই
আমি ভালোবাসতে চাই, পাগলের মতো
ভালোবাসতে চাই -
এই কি আমার অপরাধ !
আজ বিষাদ ছুঁয়েছে বুক, বিষাদ ছুঁয়েছে বুক
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই;
তোমার আসার কথা ছিলো, তোমার যাওয়ার
কথা ছিলো -
আসা-যাওয়ার পথের ধারে
ফুল ফোটানোর কথা ছিলো
সেসব কিছুই হলো না, কিছুই হলো না;
আমার ভেতরে শুধু এক কোটি বছর ধরে অশ্রুপাত
শুধু হাহাকার
শুধু শূণ্যতা, শূণ্যতা ।
তোমার শূণ্য পথের দিকে তাকাতে তাকাতে
দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেলো,
সব নদীপথ বন্ধ হলো, তোমার সময় হলো না -
আজ সারাদিন বিষাদপর্ব,সারাদিন তুষারপাত...
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই ।
মহাদেব সাহা
-------------
বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই,
মন ভালো নেই;
ফাঁকা রাস্তা, শূন্য বারান্দা
সারাদিন ডাকি সাড়া নেই,
একবার ফিরেও চায় না কেউ
পথ ভুল করে চলে যায়,এদিকে আসে না
আমি কি সহস্র বর্ষ এভাবে
তাকিয়ে থাকব শূণ্যতার দিকে?
এই শুন্য ঘরে, এই নির্বাসনে
কতোকাল,আর কতোকাল !
আজ দুঃখ ছুঁয়েছে ঘরবাড়ি,
উদ্যানে উঠেছে ক্যাকটাস -
কেউ নেই, কড়া নাড়ার মতো কেউ নেই,
শুধু শূণ্যতার এই দীর্ঘশাস, এই দীর্ঘ পদধনি।
টেলিফোন ঘোরাতে ঘোরাতে আমি ক্লান্ত
ডাকতে ডাকতে একশেষ;
কেউ ডাক শোনে না, কেউ ফিরে তাকায় না
এই হিমঘরে ভাঙ্গা চেয়ারে একা বসে আছি।
এ কী শাস্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো ঈশর,
এভাবে দগ্ধ হওয়ার নাম কি বেঁচে থাকা !
তবু মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, আমি বেঁচে থাকতে চাই
আমি ভালোবাসতে চাই, পাগলের মতো
ভালোবাসতে চাই -
এই কি আমার অপরাধ !
আজ বিষাদ ছুঁয়েছে বুক, বিষাদ ছুঁয়েছে বুক
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই;
তোমার আসার কথা ছিলো, তোমার যাওয়ার
কথা ছিলো -
আসা-যাওয়ার পথের ধারে
ফুল ফোটানোর কথা ছিলো
সেসব কিছুই হলো না, কিছুই হলো না;
আমার ভেতরে শুধু এক কোটি বছর ধরে অশ্রুপাত
শুধু হাহাকার
শুধু শূণ্যতা, শূণ্যতা ।
তোমার শূণ্য পথের দিকে তাকাতে তাকাতে
দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেলো,
সব নদীপথ বন্ধ হলো, তোমার সময় হলো না -
আজ সারাদিন বিষাদপর্ব,সারাদিন তুষারপাত...
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই ।
Subscribe to:
Posts (Atom)